নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের ইলিশের খ্যাতি দেশজুড়ে। দেশের বাইরেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। মাছের পাশাপাশি ইলিশের ডিমের চাহিদাও কম নয়। সাগর ও নদী থেকে ইলিশের ডিমের আমদানি কম হওয়ায় বেড়েছে দাম। এখন কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। যদিও কিছুদিন আগেও ইলিশের ডিমের দাম কেজিতে ছিল ১২ থেকে ১৩০০ টাকা। তাই দাম শুনে অনেক ক্রেতাই ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতেই।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, ইলিশের ডিম সংরক্ষণ ও মাছগুলো লবণ দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াজাত করে প্রায় এক বছর সংরক্ষণের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। তবে মাছ নরম হলেও ডিম তরতাজা থাকে। গত বছরের তুলনায় এবার মাছ অনেক কম আমদানি হওয়ায় ডিমের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আড়তগুলোর কর্মচারীরা নরম ইলিশ কেটে লবণ দিয়ে নোনা ইলিশ তৈরি করছেন। মাছের ডিমগুলো আলাদা করে প্লাস্টিকের বক্সে করে সংরক্ষণ করছেন। আর মাছগুলো সারিবদ্ধভাবে স্তূপ দিয়ে রাখছেন। ডিমের দাম চড়া হওয়ার ক্রেতাদের খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
চাঁদপুর মাঝঘাটে ডিম কিনতে আসা চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোড এলাকার বাসিন্দা কেএম সালাউদ্দিন জানান, ইলিশ মাছের অনেক দাম। মাছের অতিরিক্ত দাম হওয়ায় আমরা চাঁদপুরের স্থানীয় বাসিন্দা হয়েও কিনতে পারি না। বাসার সবাই ইলিশের ডিম অনেক পছন্দ করে। তাই চেয়েছিলাম ইলিশের ডিম কিনতে কিন্তু ডিমেরও অনেক দাম। এক কেজি ইলিশের ডিমের দাম ৩০০০ টাকা। এতো টাকা দিয়ে ডিম খাওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।
আরেক ক্রেতা ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দা হানিফ বলেন, আমি ইলিশের ডিম কিনতে চেয়েছিলাম। ইলিশ ও ডিমের দাম বাড়তি থাকায় এখন খালি হাতেই ফিরে যেতে হচ্ছে।
চাঁদপুর ফ্রেশ মাছের আড়তের ম্যানেজার ইব্রাহিম কাজী জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ইলিশ মাছগুলোকে দুটি ভাগে আলাদা করা হয়। তার মধ্যে তাজা মাছগুলো বিক্রি করা হয়। আর লবণ দিয়ে লোনা ইলিশ তৈরি করা হয়। এ লোনা ইলিশ তৈরি করার জন্য নরম মাছগুলো কেটে লবণ নিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লোনা ইলিশ তৈরি করা হয়। আর ডিম আলাদা করে বিক্রি করা হয়। মাছের আকারের ওপর ডিমের আকার নির্ভর করে। সাইজ অনুযায়ী ডিমগুলো আলাদা করা হয়। সাইজের ওপর ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়।
মেসার্স খান অ্যান্ড সন্স পরিচালক আদর খান বলেন, এবার ইলিশ মাছের ডিমের দাম অনেক বেশি। কারণ বর্তমানে ইলিশ মাছের অনেক সংকট। বড় সাইজের ডিমের কেজি ৩ হাজার টাকা এবং ছোট সাইজের ডিমের কেজি ২৭০০ টাকা।
ইলিশের ডিম বিক্রেতা আড়তদার সমর বলেন, হাতিয়া, সন্দীপ, ভোলা, বরিশালের ইলিশের ডিম একটু বেশি পাওয়া যায়। সামুদ্রিক ইলিশের ডিম কম পাওয়া যায়।
ইলিশের ডিম বিক্রেতা আড়তদার দাদন মিয়া জানান, হাতিয়ার ইলিশের ডিমের মান অনেক ভাল। ডিমের দাম অনেক বেশি থাকে। মাছ থেকে ডিমগুলো সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও অনলাইন বিক্রি করা হয়। আগে এক কেজি ইলিশের ডিম এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা বিক্রি হতো। এখন চাঁদপুর মাছ ঘাটে ইলিশ সরবরাহ কম থাকায় ডিমের দাম বেড়ে গেছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার বলেন, চাহিদা অনুযায়ী মাছ কম। যার কারণে ডিমের দাম চড়া। বর্তমানে ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকায় ১ কেজি ডিম পাইকারি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। মাছের আমদানি কমে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়ে গেছে।