নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরে ৫টি সংসদীয় আসনে ১১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ৩২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। পাঁচটি আসনে মোট ৪৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এ ঘোষণা দেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, পাঁচটি আসনে মোট ৪৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে চাঁদপুর-১ আসনে পাঁচজন, চাঁদপুর-২ আসনে একজন, চাঁদপুর-৪ আসনে দুইজন ও চাঁদপুর-৫ আসনে তিনজনসহ মোট ১১ জনের ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত গরমিল থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তবে চাঁদপুর -৩ (সদর-হাইমচর) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে সবাই বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯ জন। এদের মধ্যে ভোটার তালিকায় গড়মিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম হোসেন, মোঃ মোহাম্মদ রাহাদ চৌধুরী, মোহাম্মদ শওকত হোসেন মিয়া, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী অন্য জেলার ভোটার হওয়ায় বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোঃ জামাল হোসেন এবং হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের মোঃ সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
চাঁদপুর-২ (মতলব দক্ষিণ-মতলব উত্তর ) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাতজন। এদের মধ্যে ঋণ খেলাপীর দায়ে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহ আলম সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বতন্ত্র প্রার্থী চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সামছুল হক ভূঁইয়া, মৎস্যজীবী লীগ নেতা আলহাজ রেদোয়ান খান বোরহান। তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে তাদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চড়ান্ত করেননি দল। এছাড়াও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. মহসীন খান, জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো. কাওছার মোল্লা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর মো. মাইনুদ্দিন, বাংলাদেশ তরিকত মনোনীত প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সবাইকে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১১ জন। এদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে ঋণ খেলাপির কারণে জাতীয় পার্টির সাজ্জাদ রশিদ এবং ব্যাংক ঋণ খেলাপির দায়ে তৃণমূল বিএনপির মোহাম্মদ সেলিমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসন থেকে ৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।এদের মধ্য স্বতন্ত্র মোঃ জাকির হোসেন প্রধানিয়ার সমর্থনসূচক তালিকা যাচাই করে সঠিক না পাওয়ায়, হলফনামায় মামলা সংক্রান্ত তথ্য গোপন রাখায় বাংলাদেশ সংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আক্তার হোসেনের এবং জাসদের মোঃ মনির হোসেন মজুমদারের ফরম ২০ ও ২১ পূরণসহ স্বাক্ষর না থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রার্থীতা ফিরে ফেতে আমি আপিল করব। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আমার অবস্থান থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। উচ্চ আদালতে যাব।
চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মৎস্যজীবী লীগ নেতা আলহাজ রেদোয়ান খান বোরহান বলেন, এ নির্বাচনটি একটি অংশগ্রহণ হোক এটা প্রত্যাশা করছি।
মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষনা করার পর চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন ,সবকিছু ঠিকঠাক আছে। আমি ১৫ বছর ধরে আমার এলাকার জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। যেহেতু আমার আসনে অনেক প্রার্থী আছে, আশা করি এবার ভালো ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জনগণ আবারো আমাকে সেবা করার সুযোগ দেবে এটিই প্রত্যাশা। সবচেয়ে বড় বিষয় একটি ভালো নির্বাচন হবে।
জেলা প্রশাসক জেলা রিটানিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আগামীকাল সকাল থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশনের কাছে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আবেদন করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।