নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
ঈদের আনন্দ স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে চাঁদপুরে আসতে শুরু করেছেন কর্মজীবি মানুষ। বৃহস্পতিবার চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার থেকে দীর্ঘ ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি চাকরিজীবিরা। তাই নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটতে দেরি করছেন না চাকরিজীবীরা।
নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের আসল যুদ্ধ শুরু মূলত গতকাল থেকেই। কারণ সোমবার অফিস শেষ করে কেনা কাটা করে । আর এই দিন থেকে শুরু হচ্ছে ঈদুল আযহার সরকারি ছুটি। এছাড়া চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশসোমবার থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। সকাল থেকে এই যাত্রা শুরু হলেও রাত থেকে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ থাকবে সবচেয়ে বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকালে যাত্রীর সংখ্যা অনেকটা কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে ঘরমুখো মানুষের এ ভিড় দেখা গেছে।
লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের হয়রানিমুক্ত রাখতে বারবার মাইকিং করছে প্রশাসন। কিন্তু লঞ্চ থেকে যাত্রীরা নামার সঙ্গে সঙ্গেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা যাত্রীদের লাগেজ ধরে টানাটানি করছেন। আবার চাওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। তবে পুলিশ সদস্যদের তৎপরতায় হয়রানি এড়াতে সক্ষম হচ্ছেন অনেকেই। এছাড়া ঘাটে রয়েছে নৌ পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দল। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে লঞ্চঘাটে পুলিশের সঙ্গে কাজ করছেন বিআইডব্লিউটিএ ,ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও স্কাউটের সদস্যরা।
তবে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটের যাত্রীদের অভিযোগ, তাদের জিম্মি করে চালকরা ভাড়া নিচ্ছেন কয়েক গুণ বেশি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাত্রীদের অনেকে। অন্যদিকে গতকাল সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ঘাটে আসা যাত্রীদের অনেকটা বিপাকে গড়তে হয়েছে।
ঢাকা থেকে লঞ্চে আসা এক যাত্রী রহিম বলেন, ঘাটে সিএনজি ডাইভাররা অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছে।
এদিকে ঢাকা থেকে আসা চাঁদপুর শহরের পালপাড়া এলাকার ভাসিন্দা নয়ন, আরেক যাত্রী ইসমাইল খসরু জানান, ঢাকা থেকে আসার সময় কোন সমস্যা হয়নি । তবে বৃষ্টিতে আসলাম । এতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
করিম নামে এক যাত্রী জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দটাই অন্যরকম। এজন্য লঞ্চে আসালাম। ভেবেছিলাম অনেক ভিড় হবে। কিন্তু ঈদের সময় যে ভিড় হওয়ার কথা সেই রকম ভিড় হয়নি। তবে সদর ঘাটে কিছুটা ভিড় ছিল।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ফেরদৌস নামে আরেক যাত্রী জানান, চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে আসলাম । বৃষ্টির কারণে এখন বরিশাল যেতে পারছিনা। লঞ্চ বিলম্ব হচ্ছে। নদীতে অনেক স্রোত যার কারণে লঞ্চ আসতেছে না। লঞ্চ আসলে যেতে পারব। আগে বরিশালের ঢাকা থেকে যে লঞ্চটি চাঁদপুরে আসার কথা সেটি এখানে ভিড়ানি। এখন যদি লঞ্চ না আসে তাহলে ট্রলারে করে যেতে হবে।
লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি আবু সাঈদ জানান,বর্ষার মৌসুমে লঞ্চে যাত্রী কম থাকে । তাছাড়া সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হওয়ায় এবার ঈদে নৌপথে যাত্রীদের সংখ্যা কমেছে। করোনার পর থেকে আমাদের ব্যবসা ধস নেমেছে। আমাদের ব্যবসা একেবারে নাই বললেই চলে। পুরানো ব্যবসাহী হিসেবে ধরে রাখছি।
চাঁদপুর সদর নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ঘরমূখী মানুষের যাত্রা নিবিগ্ন করতে আমরা নিরলস ভাবে কাজ যাচ্ছি। যাত্রীদের সেবায় আমরা তৎপর রয়েছি। নিয়মিত অফিসার ফোর্সের পাশাপাশি অতিরিক্ত অফিসার ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো লঞ্চ টার্মিনালটি সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করছি। তাছাড়া কন্ট্রোল রুম রয়েছে। যাত্রীদের সেবায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। পকেটমার, ছিনতাইকারী ও দুষ্কৃতিকারীরা যাতে কোনো রকম অপকর্ম করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি।
চাঁদপুর নদী বন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং বন্দর ও পরিবহন বিভাগের পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে বন্দর সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাতে অতিরিক্ত যাত্রী, ভাড়া না নেয়া হয়। আমাদের কাছে অতিরিক্ত লঞ্চ রির্জাভ আছে। যদি যাত্রীদের চাপ দেখা যায় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হওয়ায় নৌপথে যাত্রীদের সংখ্যা কমেছে। যার কারণ সড়ক পথে গন্তব্য স্থানে পৌছতে সময় কম লাগে।তবে যাত্রীদের নৌ পথ করার জন্য লঞ্চ ভাড়া কমানো হয়েছে। এছাড়াও লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের সুবিধার্থে অনেক টাকার মধ্যে ভাড়া নিচ্ছে। আমরা কোন যাত্রীকে ফিরিয়ে দিতে চাই না। এরুটে দৈনিক ৮০টি লঞ্চ চলাফেরা করে।