মতলব উত্তর ব্যুরো :
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডিপি) প্রকল্পের মেয়াদ আছে আর চার মাস। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিরুদ্ধে এলডিডিপি প্রকল্পের ডেমো (নমুনা) খামার নিয়ে চোখ পালানি খেলা শুরু হয়েছে। সঠিক সময়ে কাজ বাস্তবায়ন হয়নি, মাত্র দু’একটা শেড দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সঠিকভাবে শেড নির্মাণ হয়নি, গ্রাহকদের একাউন্ট থেকে জোর করে টাকা নিয়ে পছন্দের ব্যক্তিকে দিয়ে শেড নির্মাণ এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ওই প্রকল্পের সদস্য দুস্থ ও অসহায় খামারিরা প্রাণী সম্পদ অফিসের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন।
প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়া অর্থ দিয়ে মতলব উত্তর উপজেলায় ছাগল-ভেড়া ও পোল্ট্রি পালনের জন্য ১২০টি শেড নির্মাণ করে দেওয়া হবে এই প্রকল্পের খামারিদের। ছাগল ভেড়ার ঘরের আকার ১০০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, পাশে ৮০ ইঞ্চি, মেঝে থেকে উচ্চতা ৫ ফুট এবং মাটি থেকে মেঝে ২ ফুট মটকা হবে। ঘরের বেড়া মেঝে থেকে দুই ফুট উচ্চ পর্যন্ত প্লেন ষ্টিল সিট দিয়ে চার পাশ ঘেরা থাকবে অবশিষ্ট অংশ মেহগিনি কাঠের বাটাম এবং প্লাস্টিক মোড়ানো জিআই তারের জালি দিয়ে ঘেরা থাকবে। আর পোল্ট্রি শেডের ক্ষেত্রে ৮০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য প্রস্থ হবে ৬০ ইঞ্চি, উচ্চতা মেঝে হতে ৪ ফুট প্রি কাস্ট সিমেন্টের ছয়কোনা খটি এবং ২ ফুট উঁচু মটকা হবে। মাটি হতে মেঝে ১ উঁচু থাকবে। ঘরের বেড়ােে মঝ থেকে ২ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত প্লেস ষ্টিল সিট দিয়ে চার পাশ ঘেরা থাকবে, অবশিষ্ট অংশ মেহগিনি কাঠের বাটাম এবং ১৪ নম্বর গেজ জিআই তারের পাজি নয়ে ঘেরা থাকবে। ঘরে উটা নামার জন্য মেহগিনি কাঠের ২ ফুট চওড়া একটি রাম্প সংযুক্ত থাকবে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর উক্ত প্রকল্পের শেড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। ওখানে গিয়ে দেখা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী শেডগুলো নির্মাণ করা হয়নি। শেড তৈরিতে ডিজাইন অনুযায়ী মানসম্মত মালমাল ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি লোক দেখানের জন্য মাত্র দু’টি ঘর নির্মাণ করেই উদ্বোধন করা হয়েছে। শেড না বুঝিয়ে দিয়ে খামারিদের উপজেলা পরিষদে ডেকে আনার কারণে তারা চড়াও হয়েছেন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার উপর। চোখ পালানি খেলা হল, উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে প্রতিটি খামারির ব্যাংক একাউন্টে। বিশ্ব ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী নিদির্ষ্ট ডিজাইনে খামারিরাই শেড তৈরি করবে। কিন্তু উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা খামারিদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চেক এ স্বাক্ষর করিয়ে নিজেই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। ১২০ টি শেড এর জন্য ২০ হাজার টাকা করে মোট ২৪ লাখ টাকা গ্রাহদের চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে তুলে নেন তিনি। পরবর্তীতে তার পছন্দের দুই ব্যক্তি নিয়োগ করেন শেড তৈরির জন্য। সেখানেও শেড নির্মাণে তারা নিম্বমানের মালামাল দিয়েছেন। তবে শেড নির্মাণ কাজ কাগজপত্রে শেষ হলেও বাস্তবে মাত্র শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আমিনুর রহমান নুর এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই প্রকল্প সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এই কথা বলে তিনি এড়িয়ে যান।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, নিয়ম বহির্ভূত শেড নির্মাণের জন্য দুই ব্যক্তিকে নিয়োগ করেছেন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা। ওই দুই ব্যক্তি হল উপজেলার ঢালীকান্দি গ্রামের মোঃ আমির হোসেন সিকাদর ও রাঢ়ীকান্দি গ্রামের মোঃ ওয়াছকুরুনী সরকার। এই দুই ব্যক্তির সাথে চুক্তি করা হলেও ওই শেডগুলো তারা নিমার্ণ করেন নি।
জানা গেছে, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মুহাম্মদ জাকির হোসেনের নিকটাত্মীয় তৃতীয় শ্রেণীর এক সরকারি কর্মচারী (স্বাস্থ্য সহকারী) মোঃ শাহজালালকে দিয়ে শেডগুলো তৈরি করেছেন। এতে করে ক্ষিপ্ত হয়েছেন চুক্তিবদ্ধ ওই ব্যক্তিরাও। ঘটনার পিছনে এমন ঘটনাই উঠে এসেছে।
শেড উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা ক্ষুদ্র অসহায় খামারি একাধিক নারী বলেন, আমাদের একাউন্টে সরকার ২০ হাজার টাকা করে দিয়েছে, ছাগল-ভেড়া ও পোল্ট্রি পালনের শেড তৈরির জন্য। কিন্তু প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আমাদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চেক এ স্বাক্ষর করে তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন। এবং বলেছেন সরকার নাকি তাদের দায়িত্ব দিয়েছে তারাই ঘর করে দিবে। আমরা বলেছি আমরাই ঘর নির্মাণ করবো, যদি ২০ হাজারের বেশি টাকাও লাগে আমরা ভালো করে করব। কিন্তু অফিসার তা মানেন নি। এখন এই ঘর নিয়ে আমরা ছাগল-ভেড়া এবং পোল্ট্রি পালন সম্ভব না, তাই এই ঘর আমরা নিব না।
এদিকে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (অ.দা.) ডাঃ মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক অর্থ দিলেও আমাদের মাধ্যমে শেড তৈরি করার নিময় আছে। ঘর মানসম্মত করেই করা হয়েছে। প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়নি।