আজ থেকে মাছের জন্য নদীতে নামা ভুল নয়, অপরাধ: জেলা প্রশাসক

মাসুদ রানা ॥

১২ অক্টোবর রাত ১২:০১ টা থেকে আগামী ৪ নভেম্বর রাত ১১:৫৯ পর্যন্ত পদ্মা মেঘনায় সবধরনের মাছ ধরা নিষেধ। তারই অংশ হিসেবে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিমান বাস্তবায়নে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন (মোলহেড) প্রাঙ্গণে বিকাল ৩ টায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

এসময় তিনি বলেন, আমরা আমাদের নিজের বাড়িতেই রাস্তাঘাট বা অন্য জায়গা থেকে নিরাপদ থাকি,এই কথাটা যদি আমরা ফিল করি তাহলে ইলিশের বাড়িতে ইলিশ কেন নিরাপদে থাকবে না? এবার আমরা “ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর” এই স্লোগান কে সামনে রেখে ইলিশ কে ইলিশের বাড়িতে নিরাপদে থাকতে দিব। আমরা যদি একটা মা ইলিশ তার বাড়িতে থাকতে দিতে পারি তাহলে আগামীতে এক লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ ইলিশ আমরা পেতে পারি। এখন সিদ্ধান্ত আমাদের সরকার আগামী ২২ দিন এর জন্য আইন করেছে ইলিশ মাছ ধরবেন না, খাবেন না, ক্রয় করবেন না, পরিবহনও করবেন না এগুলো সমস্ত কিছুই ভুল নয় অপরাধ। যদি এই অপরাধ করি তাহলে জেল-জরিমানা রয়েছে।

তিনি বলেন, সকল মৎস্য ব্যবসায়ী, জেলে, আরতদারসহ প্রত্যেককে আমরা জানিয়ে দিয়েছি,অবগত করে বলেছি আপনাদের কাছে অনুরোধ, আগামী ২২ দিন আপনারা কেউ মাছ ধরার জন্য নদীতে নামবেন না। যারা আরতদার আছে তাদের বলছি আগামী ২২ দিন কোন ইলিশ মাছ ক্রয় বিক্রয় হবে না। সমস্ত বরফ কল বন্ধ থাকবে। যাত্রী পারাপার করে এমন স্পিড বোট ছাড়া অন্য কোন স্পিডবোর্ড নদীতে চলবে না। প্রত্যেক রেস্টুরেন্টকে বলে দিয়েছি এই সময়ে কোন রেস্টুরেন্টে ইলিশ মাছ রান্না এবং সংরক্ষণ করা যাবে না। প্রত্যেকটা বাজারে মনিটরিং সেল বসিয়ে দিয়েছি যেন কোন মৎস্য ব্যবসায়ী ইলিশ মাছ বিক্রি করতে না পারে, কেউ কিনতে না পারে। আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি কিন্তু এ সমস্ত পদক্ষেপ কোনটারেই প্রয়োজন নেই যদি নদীতে মাছ না ধরেন।

এই ইলিশ হল আপনার সন্তানের মত, আমরা চাই আপনি আপনার সন্তানকে খুব সুন্দর ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং লালন পালন করেন তাতে আপনারাই লাভবান হবেন। অনেকে ভাবেন এই ২২ দিন ইলিশ মাছ প্রচুর পাওয়া যায় সেই লোভেই আমরা ইলিশ মাছ ধরতে বাধ্য হই। তাহলে আপনাদের কাছে প্রশ্ন গত ১ মাসে যে মাছ আপনারা ধরেছেন সে মাছেও আপনারা ডিম পেয়েছেন। তারমানে একজন মা যেমন সন্তান প্রসবের আগে যেমন সন্তানের প্রতি যত্নবান থাকেন, তেমনি সন্তান প্রসবের পরেও একটু বড় না হাওয়া পর্যন্ত যত্নবান থাকে। মাছও ডিম ছাড়ার আগে যেমন মিঠা পানিতে চলে আসে নিজের সন্তানের ভালোর জন্য, আবার ডিম ছাড়ার পরেও কিন্তু নিজের সন্তানকে একটু বড় করার জন্য বেশ কিছু সময় সেই মিঠা পানিতে থাকে। তখন তো আপনারা কারেন্ট জাল ব্যবহার না করে মাছ ধরতে পারবেন। তাই আসুন আমরা মা ইলিশ সম্পদ রক্ষা করি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব রশিদের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, নৌ পুলিশ সুপার মোশফিকুর রহমান, মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  মোঃ আমিরুল ইসলাম, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি সাহাদাত হোসেন শান্ত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত, চাঁদপুর কোস্টগার্ডের ষ্টেশন কমান্ডার সাব লেফটেন্যান্ট এম ফজলুল হক, জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক তসলিম বেপারী।

বক্তারা বলেন, আইন প্রয়োগের আগে আপনাদের সকলকে সমস্ত মাধ্যমে সচেতন করিয়ে দেয়া হয়েছে সুতরাং আমরা আশা করব আপনারা কেউ আইন অমান্য করে নদীতে মাছ ধরার জন্য নামবেন না। আপনাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য যে কাজটুকু করা দরকার সেটা হলো আমরা প্রত্যেকে আগামী ২২ দিন মাছ ধরা, বহন এবং ক্রয় থেকে বিরত থাকবো। যদি বিরত না থাকেন তাহলে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় যে আইন আছে সে আইনের আমরা কঠোর প্রয়োগ করব।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, গীতা পাঠ করেন বিজয় কুমার দাস।

Loading

শেয়ার করুন: