মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন ॥
৩ কিলোমিটার লাঠিতে ভর করে এক পায়ে হেঁটে, শারীরিক প্রতিবন্ধী খালেদা অবশেষে ডিগ্রি পাস করেছে। তার এ অনুপ্রেরণার উৎস যোগান দিয়েছেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ ওচমান গনি পাটওয়ারী।
শারীরিক প্রতিবন্ধী খালেদা আক্তার ১ম বর্ষে অধ্যয়রত অবস্থায় আর্থিক সংকটে লাঠিতে ভর করে যখন মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতে না প্রতিবন্ধকতার শিকার হত। তখন এক পর্যায়ে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে খালেদাকে নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী খালেদার পাশে এসে দাঁড়ান চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওচমান গণি পাটওয়ারী। সে সময় তিনি এ শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা করেন।
জানা যায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার পাতানিশ গ্রামের বকাউল বাড়ির এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া খালেদা অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর মানসিক মনবল কাজে লাগিয়ে প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও কিভাবে সাফল্য আনা যায় তার বাস্তব এক উদাহরণ প্রতিবন্ধী খালেদা। সে হাজীগঞ্জ উপজেলার সুহিলপুর ডিগ্রি মাদ্রাসা থেকে ২০১৬ দাখিল, ২০১৮ আলিম ও সর্বশেষ ২০২২ ফাযিল (ডিগ্রি) লাভ করেন।
এ বিষয়ে সুহলিপুর ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুর রহিম বলেন, খালেদা খুবই অসহায় একটি মেয়ে, তাকে আমরা সম্পূর্ণ ফ্রিতে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছি। সে ডিগ্রি পাস করায় আমরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে নিয়ে গর্বিত।
সুহিলপুর এবিএস ডিগ্রি মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি ও হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আশফাকুল আলম চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, আমি যতোটুকু জানি খালেদা খুব অসহায় পরিবারে জন্ম নিয়েও প্রতিটি মুহূর্তে জীবনের সাথে লড়াই করে লাঠিতে ভর দিয়ে তিন মাইল এক পায়ে হেঁটে লেখা পড়া চালিয়ে আসছে যা বিরল একটি ঘটনা।
সে কষ্ট করে ডিগ্রি পাস করেছে। তাঁর এ সাফল্যে আমরা গর্বিত। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটোয়ারী
খালেদার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে ভাবে সহায়তা করেছেন এবং ডিগ্রি পাস করলে চাকুরি দিবেন, আমি আশা করছি তিনি সে কথা রাখবেন,এতে তিনি এক মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।
আমি শুনেছি,২০১৮ সালে খালেদা আলিম পাস করার পর চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন পত্রিকায় ‘তিন কিলোমিটার লাঠিতে ভর করে এক পায়ে হেঁটে শারীরিক প্রতিবন্ধী খালেদার এইচএসসি পাস’ এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে, চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গণি পাটওয়ারী খালেদার বাড়িতে নিজের গাড়ি পাঠিয়ে তাকে জেলা পরিষদে নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে উৎসাহ প্রদান করেন। সেই সাথে খালেদাকে ১০ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন। চেক প্রদানকালে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গণি পাটওয়ারী বলেন, খালেদা ডিগ্রি পাস করলে তাকে জেলা পরিষদে প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরি দেবেন।সে সূত্র ধরে আমি বিশ্বাস করি তিনি তাঁর কথা রাখবেন।
খালেদার সাথে একান্ত সাক্ষাত বলেন, আমি সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গণি পাটওয়ারী, তিনি তাঁর কথা রাখবেন, তিনি আমাকে চাকরি দিবেন বলেছেন, সে থেকে আমি স্বপ্ন দেখেছি নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। আমি কারো বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না। আমি চাকুরি পেলে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারবো। আলহাজ ওচমান গণি স্যার পুনঃরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় আমি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে স্যারের জন্য দোয়া করেছি। আমি ডিগ্রি পাস করেছি যার পিছনে স্যারের অনে অবদান রয়েছে। তাই আমার বিশ্বাস ওচমান স্যার আমার পাশে দাঁড়াবেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী খালেদার স্বপ্নপূরণে তার পাশে দাঁড়াবেন।