নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপেেথ দীর্ঘদিন ধরে এমনিতেই নেই কোনো লোকাল ট্রেন । তার উপর বেশ কয়টি রেল স্টেশনে বিরাজ করছে নানা সমস্যা। এ রেল পথের ১১টি স্টেশনের মধ্যে ছয়টি স্টেশনে নেই কোনা রেলওয়ে স্টাফ বা কর্মচারী। কর্মকর্তা বা কর্মচারী সঙ্কটের দোহাই দিয়ে এসব স্টেশন এখন অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে আছে। অধিকাংশ রেলওয়ে স্টেশন নানা সমস্যায় জর্জরিত। এতে করে প্রতিনিয়ত যাত্রীরা পোহাচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
মধুরোড স্টেশনটির প্লাটফর্মের ফ্লোর মারাত্মকভাবে দেবে যাওয়ায় প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ট্রেনে ওঠানামা করতে গিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার নজির প্রায়ই ঘটছে।
তাছাড়া মৈশাদী,শাহতলী,বলাখাল,উয়ারুক,শাহরাস্তি,চিতোষী স্টেশনগুলোতে রেলওয়ের স্টাফ না থাকায় রাতের বেলায় অনেকটা ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে। কিন্তু এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নিকট ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ করেও পাচ্ছেন না কোনো প্রতিকার এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
মধুরোড রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব পাশে ট্রেনে যাত্রীদের ওঠানামাসহ চলাচলের যে স্থান রয়েছে, সে পথের একটি স্লাবের নিচের বালি সরে গিয়ে এক ফুটের মতো দেবে গেছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড়ো অসংখ্য দুর্ঘটনা। এছাড়াও যাত্রীদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে স্থাপিত প্লাটফর্মের কয়েকটি বেষ্টনীও ভেঙ্গে যাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে যাত্রী সাধারণ। সেই সাথে এই স্টেশনের প্লাটফর্মে নেই যাত্রীদের বসার কোনো ব্যবস্থা। এতে খুব কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সকল বয়সী যাত্রীকে। স্টেশনের ভেতরের একটি কক্ষে যাত্রীদের বসার জন্যে কয়েকটি চেয়ার থাকলেও বসার নেই কেনো পরিবেশ।
এ বিষয়ে কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আমরা এই স্টেশন থেকে প্রায় সময় চট্টগ্রাম, লাকসামসহ বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনে যাতায়াত করে আসছি। কিন্তু স্টেশনের চলমান নানা সমস্যার কারণে যাত্রীদের মারাত্মক দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। আমরা এই সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।
কয়েকটি স্টেশন এলাকার বাসিন্দা জানান, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি পুরানো এই স্টেশনগুলোর উপর দিয়ে প্রত্যেকদিন অনেক যাত্রী যাতায়াত করলেও যাত্রী সেবা উন্নয়নে স্টেশনগুলির জন্যে কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করছে না। মধুরোড স্টেশন প্লাটফর্মের পূর্ব দিকে একটি স্লাব দেবে গিয়ে যাত্রীদের ওঠানামায় মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। গত ৩-৪ দিন আগেও কয়েকজন যাত্রী চট্টগ্রামগামী সাগরিকা ট্রেনে দৌড়ে উঠতে গিয়ে দেবে যাওয়া স্লাবে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও রাতের বেলায় মেঘনা ট্রেন থেকে নামতে ও উঠতে গিয়েও আহত হয়েছেন অনেকে। মৈশাদী স্টেশনে নেই প্লাটফর্ম। শুধুমাত্র সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন এ স্টেশনে থামে। ট্রেনে ওঠতে বা নামতে গিয়ে যাত্রীদের অবর্ননীয় সমস্যা পোহাতে হয়।
মধুরোড রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জানান, আমি প্রায় দেড় মাস হবে এখানে এসেছি। এসেই স্টেশনের কয়েকটি সমস্যা লক্ষ্য করে আসছি। তবে গত ক’দিন যাবত প্লাটফর্মের একটি স্লাব দেবে যাওয়ার কারণে ছোট-বড়ো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন কয়েকজন যাত্রী। নিচের বালি পার্শ্ববর্তী জমিতে সরে গিয়ে আরেকটি স্লাবও দেবে যাওয়ার উপক্রম প্রায়। এই সমস্যাটির কথা ডিইএনকে জানানো হলে তার পক্ষে লোকজন এখানে এসে দেখে যান।
চাঁদপুর রেলওয়ের কর্মচারী সোলাইমান বলেন, মধুরোড স্টেশনে ১৫ ফুটের একটু স্লাব দেবে গেছে, আরেকটি স্লাবও আশঙ্কাজনক। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখে এসে লাকসামে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এমনকি সমস্যাটির ছবিও তুলে এনে ওখানে পাঠিয়েছি। নির্দেশনা এলে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে লাকসামের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শহীদ উল্যাহর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টার সমস্যাটির কথা আমাকে জানাননি। তারপরও আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করে সরজমিনে গিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো। অন্য স্টেশনগুলিও দেখব।