ক্ষতিগ্রস্ত দলিল লিখকদের থানায় জিডি, জেলা পরিষদের নির্বাহীর বিরুদ্ধে দোকান মালিকদের অভিযোগ

 

হাসান মাহমুদ, হাজীগঞ্জ ॥

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৪টি দোকানঘর পুড়ে কোটি টাকার ক্ষতিসহ প্রায় ১০ হাজার পুরানো দলিল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। এই ঘটনায় চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা টাকা চাওয়ার অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ভাড়াটিয়ারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদকর্মীদের বক্তব্য দিয়েছেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. মনোয়ার হোসেন।

এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি পরিকল্পিত উল্লেখ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ভাড়াটিয়ারা। এ ঘটনায় শনিবার (২২ মার্চ) হাজীগঞ্জ থানায় ১১ জন ভাড়াটিয়া সাধারণ ডায়েরী করেছেন। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ স্টেশন রোডে পৌর মার্কেটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে মার্কেটের ১৩টিসহ পাশের একাধিক দোকান পুড়ে যায়।

এদিকে থানায় দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরীতে দলিল লিখকরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেন নি। তবে সংবাদকর্মীদের কাছে তারা অভিযোগ করে বলেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী নতুন করে দোকান বরাদ্দ বাবদ তাদের কাছ থেকে এক কোটি টাকা দাবি করেন।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করার পর হাজীগঞ্জ পৌরসভা গত দুই যুগেরও বেশি সময় স্থানীয়ভাবে দোকানঘর ভাড়া দিয়ে আসছে। এর মধ্যে জেলা পরিষদ পৌরসভার ইজারা বাতিল করে। তাই, পৌরসভাও ভাড়াটিয়াদের দোকান ঘরের বরাদ্দ বাতিল করে নোটিশ দেয় এবং দোকান ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলে। বিষয়টি জানতে পেরে দোকান মালিক ও ভাড়াটিয়াগণ জেলা পরিষদে যোগাযোগ করেন।

দলিল লিখক আকতার হোসেন সংবাদকর্মীদের জানান, ৮/১০ দিন পূর্বে তাকে কথায় কথায় একজন লোক বলেছেন, সবাই যেন গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সরিয়ে নেয়। তখন বিষয়টির গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আর এখন ৮/১০ দিন পর তাদের সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। বিষয়টি সন্দেহজনক ও রহস্যজনক।

অপর দলিল লিখক মামুনুর রশিদ স্বপন ও কম্পিউটার এন্ড ফটোস্ট্যাট দোকানের মাসুদ জানান, পৌরসভা থেকে তাদের দোকান ঘরের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এরপর তারা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলাপ্রশাসকের কাছে গেলে তিনি তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন এবং তাদেরকেই দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেন।

এসময় তারা অভিযোগ করে বলেন, পরবর্তীতে দোকান বরাদ্দের জন্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কাছে গেলে তিনি তাদের কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেন। এতে ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকেরা সাড়া দেয়নি। পরবর্তীতে জেলা পরিষদের চাপ-সৃষ্টির মধ্যে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে তারা পরিকল্পিত মনে করে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ভাড়াটিয়াগণ জেলা পরিষদ কার্যালয়ে আসলে তাদেরকে প্রতিটি দোকানঘরের পজিশন অনুযায়ী ১০/১২ লাখ টাকা এবং সে অনুযায়ী ওই মার্কেটে দোকান বরাদ্দ বাবদ এক-দেড় কোটি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। যেহেতু এই ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিলেন, তাই তাদেরকে অগ্রাধীকারের কথাও বলা হয়েছিল।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, স্থানীয় তরুণ ও যুবকদের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। ওই সময়ে পুলিশ সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক একটার দিকে পৌর মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোর মধ্যে টাইলস এন্ড স্যানেটারি, প্রিন্টার্স (ছাপাখানা), দলিল লিখক, কম্পিউটার কম্পোজ ও প্রিন্ট, কনফেকশনারি দোকান রয়েছে। পুড়ে যাওয়ার দোকানগুলোর মধ্যে অধিকাংশ দলিল লিখকের অফিস-ঘর। এর মধ্যে অন্তত ২০ জন দলিল লিখকের প্রায় ১০ হাজার দলিল ও কয়েক লাখ টাকার স্ট্যাম্প পুড়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত দলিল লিখকরা হলেন, শাহাদাত হোসেন, মামুনুর রশিদ স্বপন, মাসুদ হাওলাদার, সফিকুল ইসলাম হাওলাদার, সাহাব উদ্দিন রিপন, আক্তার হোসেন, সাহাব উদ্দিন মজুমদার, ফটিক, মামুন কাজী, হেলাল উদ্দিন, তানভীর হোসেন, আব্দুল মালেক ও আনোয়ার হোসেন। তাদের সাথে আরো শিক্ষানবীস দলিল লিখক রয়েছেন।
এছাড়াও আগুনে মাসুদ কম্পিউটার এন্ড ফটোস্ট্যাট, ইয়াছিন কম্পিউটার এন্ড ফটোস্ট্যাট, জননি প্রিন্টার্স, মদিনা টাইলস্ এন্ড স্যানেটারী ও কাউছারের কনফেকশনারী দোকান পুড়ে যায়।

 

Loading

শেয়ার করুন: