নিজস্ব প্রতিবেদক॥
একুশেপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নজরুল গবেষক জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আর নেই (ইন্ন .. রাজেউন)। রফিকুল ইসলাম ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চাঁদপুরের কৃতি সন্তান ।
মঙ্গলবার ৩০ নভেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হাসপাতালের ডিউটি অফিসার ডা.অভিজিৎ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৭ অক্টোবর পেটের ব্যথা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন জাতীয় এ অধ্যাপক।পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ফুসফুসে পানি ধরা পড়ে তার। তখন থেকে তিনি সেখানে বক্ষব্যাধি বিভাগের অধ্যাপক ডা.একে এম.মোশাররফ হোসেনের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা রফিকুল ইসলামকে ভারতে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। পরে তাঁকে রাজধানীর এভার কেয়ারে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাতীয় এ অধ্যাপককে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়ার জন্য ভেন্টিলেশনে নেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। বিশিষ্ট নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক। ৮৭ বছর বয়সী এ লেখক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের দুর্লভ কিছু আলোকচিত্রও তুলেছিলেন তিনি।
তাছাড়া তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করেন।
রফিকুল ইসলামের জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৩৪ সাল। একজন বাংলাদেশি লেখক এবং দেশের প্রথম নজরুল গবেষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক ও অত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নজরুল-গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক। তিনি স্বাধীনতা পদক,একুশে পদক এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।
২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে পুরস্কৃত করে। ২০০৩ সালে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর’ বই লিখে লেখক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান।
শিক্ষা:
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারে।
কর্মজীবন:
১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি একসময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক।
২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। এবং তিনি বর্তমানে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তিনি কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতি পদে যোগদান করেন।
এছাড়া তিনি বর্তমানে বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। ১ জুন ২০২১ তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি পদে যোগদান করেন।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দিশিবিরে নির্যাতিত হন। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা রয়েছে।
বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের এ প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেসব ইতিহাস গ্রন্থিত করেছেন তার লেখায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বই লেখা এবং সম্পাদনা করেছিলেন তিনি।অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম একুশে পুরস্কার,স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।