নিজস্ব প্রতিবেদক:
সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৬ জুন) সকাল ৯টায় হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফ মাঠে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ জামাতে ইমামতি করেন দরবার শরিফের পীর মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানি।
অন্যদিকে সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসা মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরিফের পীর মাওলানা আরিফ চৌধুরী।
জানা গেছে, প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ১৯২৮ সালে আগাম ঈদুল আজহা, রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর পালনের নিয়ম চালু করেন সাদ্রা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইসহাক (রা.)। তার অনুসারীরা প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করা শুরু করেন। সেই থেকে বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা আরব দেশসমূহের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহাসহ ধর্মীয় উৎসব পালন করেন। এর মধ্যে জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলীপুর, ভোলাচোঁ, ঝাকনি, সোনাচোঁ, প্রতাপপুর ও সুরঙ্গচাইল গ্রাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুরঙ্গচাউল, কাইতাড়া, উভারামপুর, টোরামুন্সিরহাট, মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচানী, বাহেরচর পাঁচানী, আইটাদি পাঁচানী, দেওয়ানকান্দিসহ অর্ধশতাধিক গ্রামের মুসল্লিরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার সকাল থেকে সমেশপুর ঈদগাহ মাঠ, সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল, মাদরাসা মাঠ সাদ্রা দরবার শরীফ মাঠসহ ১২টি ঈদগাহ মাঠে এবং উত্তর সাদ্রা বায়তুল সালাম জামে মসজিদ, দক্ষিণ সাদ্রা জামে মসজিদ, উত্তর অলিপুর বেপারী বাড়ি জামে মসজিদ, উত্তর অলিপুর ঢালী বাড়ি মসজিদ, দক্ষিণ বলাখাল হাজী বাড়ি, দক্ষিণ বলাখাল স্কুল বাড়ি, পাঁচানী দরগাম মসজিদ, পূর্ব পাঁচানী সরকার বাড়ি, দেওয়ানজিকান্দি প্রধানিয়াবাড়ী মসজিদ, সাড়ে পাঁচানী প্রধানিয়া জামে মসজিদ, দক্ষিণ মাথাভাঙ্গা ভেন্ডরবাড়ী মসজিদ, পাড়ে পাঁচানী উত্তরপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ ১৮টি জেলার বিভিন্ন স্থানে মোট ৩০টি ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া স্ব-স্ব এলাকায় এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে ধর্মীয়রীতি অনুযায়ী তারা পশু জাবাই করেন।
মতলব উত্তরের দেওয়ানকান্দি গ্রামের বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, আমরা চট্টগ্রামের মির্জাখিল দরবার শরীফের অনুসারী। প্রতি বছর আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদসহ ধর্মী উৎসব উদযাপন করে আসছি। এবারও দেশটির সঙ্গে মিল রেখে কোরবান ঈদ উদযাপন করেছি।
মানিক নামে এক যুবক বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ রীতিনীতি পালন করে এসেছেন। আমরাও তা পালন করছি।
হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফের পীর মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানি বলেন, আমরা কোরআন সুন্নাহের আলোকে সাদ্রা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা পীর মাওলানা ইসহাক (র.) এর নিয়ম অনুযায়ী প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা ও ঈদ পালন করে আসছি। কোরআন সুন্নাহর ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন করে আসছি।
হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরিফের পীর ও সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী বলেন,পৃথিবীতে চাঁদ একটাই। সুতরাং পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলেই আমরা ধর্মী আচার অনুষ্ঠান এবং ঈদুল আযহা পালন করি। এবছরও একই সময়ে ঈদুল আজহা জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর হয়ে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ঈদ উদযাপন করছে। আমাদের দরবার শরীফের পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদুল আজহা শুভেচ্ছা।
হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ বলেন, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এসব গ্রামে একদিন আগে হয়ে আসছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ঈদের জামাতসহ সার্বিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, আজ জেলার বিভিন্নস্থানে পবিত্র ঈদুল আযহা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রাতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায় নেই।