চাঁদপুরে ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাস, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন চেয়ারম্যান সেলিম,পুলিশকর্মকর্তাসহ নিহত-৪

 

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥

গতকাল সোমবার (০৫ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গণ-আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন। এ খবরে বিজয় উল্লাসে ছাত্র জনতা বিকেল থেকে জেলা শহর ও উপজেলার শহর গ্রামের সবগুলো এলাকার কয়েক লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে আনন্দ করছে। ‘পলাইছেরে পলাইছে, শেখ হাসিনা পলাইছে’ স্লোগানসহ নানা ভাষায় উল্লাস করেছেন।

রাস্তায় নেমে আসা মানুষজন বলছেন, স্বৈরাচারের পতন করে দেশটাকে আরেকবার স্বাধীন করা হলো। এই গণঅভ্যুত্থান জনগণের। জনগণকে শেখ হাসিনা দাস মনে করতো। মানুষ কথা বলতে পারতো না। সেতো দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিল, জনগণ হত্যার লাইসেন্স দিল কে?

এদিকে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবর আসার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধরা।

তারা সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ভাংচুর করে আগুণ দিয়েছে।এছাড়া চাঁদপুর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভাবন, চাঁদপুর পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা, শহরের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতার বাসা বাড়ীতে হামলা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন মার্কেট, দোকান পাটে হামলা করা হয়েছে। কয়েকজন কাউন্সিলরের কার্যালয় ভাঙচুরে খবর পাওয়া গেছে। শহরের মানুষজনকে শান্ত থাকার জন্য সেনাবাহিনী শহরের বিভিন্ন স্থানে আহব্বান জানিয়েছেন। জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের পক্ষে মো: নাদিম পাটওয়ারী আনুষ্ঠানিভাবে তাদের কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষনা করেছেন।

এদিকে সন্ধ্যায় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগড়া এলাকায় লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার ছেলে চিত্রনায়ক শান্ত খানকে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধরা।

অন্যদিকে বিকেল ৪টায় বিক্ষুব্ধরা কুচয়া থানা ঘেরাও করে ।এসময় এসআই মামুনুর রশিদ সরকার থানার পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়েছে বন্ধবন্ধু ডিগ্রী কলেজ মাঠে চলে যান। সেখানে বিক্ষুব্ধরা তাকে পিঠিয়ে হত্যা করেন।

এছাড়াও বিক্ষুব্ধরা ফরিদগঞ্জ থানা ঘেরাও করতে গেলে সেখানে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত(১৮) নামে এক দোকান কর্মচারী নিহত হয়। বিক্ষুব্ধরা পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাওয়ারীর হামলা করে। এসয়ম তার দুটি গাড়ী পুড়িয়ে দেন। সাবেক মেয়র মাহফুজুর রহমান এবং কাউন্সিলর পরানের বাড়ীতে হামলা করে ভাংচুর করে।
এদিকে সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সমর্থনে জেলা শহরতলীর বাবুরহাট জেলা পরিষদের সামনে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সেখানে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন।

পুলিশ আত্মরক্ষায় কয়েক রাউন্ড টিআরসেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা জেলা পরিষদের পূর্ব এলাকায় অবস্থান নেয় এবং পুলিশ পরিষদের পশ্চিম পাশে এবং পুলিশ লাইনসের সামনে অবস্থান নেয়।

স্থানীয়রা জানান, বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বাবুরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

চাঁদপুর সদর মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থল এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানে তাদের নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইয়াসির আরাফাত।
দুপুর ১টার দিকে শহরতলীর যুব উন্নয়ন জেলা কার্যালয় এলাকায় অবস্থানরত সেনাবাহিনী ক্যাম্প থেকে বেশ কয়েকটি গাড়ি নিয়ে শহরে প্রবেশ করে সেনাবাহিনী। তারা শহর টহল দিয়ে পুনরায় ক্যাম্পের দিকে চলে যায়।

এদিকে রোববার (০৪ আগস্ট) থেকেই বন্ধ আছে ঢাকা-চাঁদপুর যাত্রীবাহী লঞ্চ, ট্রেন ও চাঁদপুর থেকে সব রুটের গণ পরিবহন। আজ সকালেও লঞ্চঘাট, চাঁদপুর রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা ফাঁকা অবস্থায় দেখা যায়। তবে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কাবস্থা রয়েছে।

Loading

শেয়ার করুন: