
আরেফিন সুমন :
” স্নায়ু বৈচিত্র্যকে বরণ করি, টেকসই সমাজ গড়ি” এ প্রতিপাদ্য নিয়ে বরাবরের মতো এইবারও সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ১৮তম বিশ্ব অটিজম দিবস সচেতনতা দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন, জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় চাঁদপুর শিশু ও প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যের আয়োজনে উক্ত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
সমাজ সেবার উপ পরিচালক মো: নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, যারা অটিজমে ভুক্তভোগী তাদের দেখভাল করেন আমাদের সমাজসেবা অধিদপ্তর। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ সেবায় এগিয়ে আসা উচিত। কারণ কি কারণে এই রোগ হতে পারে সেটা নিয়ে তাদেরও কাজ করা উচিত। সন্তানসম্ভবা অবস্থায় মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার কিংবা মায়ের অপুষ্টিগত কারণ থেকে নানা কারণ থাকতে পারে। এখানে অনেক চিকিৎসক আছেন। আমি তাদের বলবো প্রতিবন্ধী রোগী আসলে আপনারা যত্ন করে তাদের সেবা প্রদান করবেন। অনেক মানসিক বিকলাঙ্গতা থাকতে পারে। রোগীর অভিভাবকদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আমি ডাক্তার নই কিন্তু রোগীকে সূক্ষ ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। হয়তো সঠিক কারণ অনুসন্ধান করুন। তারপর ঠিক না হলে সেটা হচ্ছে আমাদের সমাজসেবার কাজ।
তিনি বলেন, এই যে প্রতিবন্ধিতা এটা কিন্তু আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে আসতে পারে। সন্তানরা প্রতিবন্ধী হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে পরিবারের পারিপার্শ্বিকতা। একজন মেয়ের সাথে যদি তার স্বামী বাজে ব্যবহার করেন তাহলে তাদের আগত সন্তান প্রতিবন্ধী হতে পারে। এখানে তার পুষ্টির কথাও এসেছে। মেয়েটার যদি তার শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পায় তাহলেও তার সন্তান প্রতিবন্ধী হতে পারে। তাই বলা হয় একজন সন্তানসম্ভবা মহিলার সাথে সবসময় সুন্দর ব্যবহার করতে হয়। আর এটা শুধু তার স্বামীর দায়িত্ব নয়, আশেপাশের সবার দায়িত্ব। ভালো খাবারের চেয়ে ভালো ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার জন্মের পর ওজন কম বেশি হয় এ আমরা দেখেছি। তার পুষ্টিগত অনেক সমস্যা হয়। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক উন্নত। সেগুলো নিয়েই বাচ্চা স্বাভাবিক থাকতে পারে। কিন্তু ভালো ব্যবহার না পেলে বাচ্চারা আস্তে আস্তে অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, অটিস্টিক বাচ্চার ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি, তার পড়াশোনা কিভাবে হবে কিভাবে তারা বেড়ে উঠবে তা আমরা চিন্তা করি। কিন্তু অটিস্টিক বাচ্চা যাতে পৃথিবীতে না আসে সেক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি বলে। একটা প্রতিবন্ধী বাচ্চার জন্য রাষ্ট্র, সেই বাচ্চাসহ বাচ্চার অভিভাবক সহ সবাই এখানে দূর্ভোগ পোহায়। এই বাচ্চাগুলোর বাবা মা একদিন মারা যাবে। তখন তার কি হবে? কে তার ভালো মন্দ বুঝবে? তখন সেই বাচ্চাটা আসলে সমাজের তথা রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এই দিবসটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজন করে পালন করা উচিত। মনে রাখতে হবে যে অটিজম মানে কি? মানে হচ্ছে একটি বাচ্চা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে জন্ম নেয়। কিন্তু তাকে অসুস্থ বলা যাবে না কোনোভাবেই। সে আপনার আমার মতই সুস্থ। তাকে নিয়ে ভাবনার কোনো কারন নেই। উল্টো এটা মনে রাখবেন সে আপনার জন্য স্পেশাল। তাকে স্পেশালি ট্রিট করবেন। আর আমি চিকিৎসকদের আবার বলবো আপনারা কিভাবে এই অটিজম দূর করা যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করুন। আমি জানি না আমাদের এই আবেদন কতটুকু যাবে কিন্তু আমরা এই প্রত্যাশা করতেই পারি।
সরকারি শিশু পরিবারের সহ পরিচালক বিপুল কুমার সাহার সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান (সার্বিক), স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার, প্রবীণ হিতৈষী সংস্থার সভাপতি এম. জি. ফারুক ভুঁইয়া, প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র নন্দী, চাঁদপুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক প্রতিমা রানী ভৌমিক, সমাজ সেবা কার্যালয়ের হিসাব সহকারী মো: ইকবাল হোসাইন, নবরুপ মানবিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি পি. এম. বিল্লাল হোসেন, সোনালী সুদিন সংস্থার সভাপতি মো: হালিম, গাজুরিয়া ইয়ুথ ক্লাবের সেক্রেটারি এডভোকেট এমরান হোসেন এবং অভিভাবকবৃন্দ।