মাসুদ রানা ॥
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেছেন, আমরা এসেছি আপনাদের স্বার্থে কাজ করতে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে। সেক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। যানজট এখন এই শহরের সবার জন্যে একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সকলেই এই যানজট থেকে পরিত্রান চায়। পৌরসভা তৈরি হয়েছে মানুষের সেবার জন্যে। মানুষের ভোগান্তি হবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।
সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে শহরের যানজট নিরসনে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, শহরের নতুন করে পৌরসভা থেকে অটোরিকশা লাইসেন্স দেয়া যাবে না। মানুষেরও কর্ম দরকার। আমরা বন্ধ করতে চাই না, কিন্তু নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে চাই।
ফুটপাতের দখল নিয়ে তিনি বলেন, যানজটমুক্ত করতে হলে ফুটপাতগুলো থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
শহরে শহরে লরি, ট্রাক, তেলবাহী গাড়ি চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জরুরি পণ্যসেবা ছাড়া শহরে লরি, ট্রাক, তেলবাহী গাড়ীগুলো রাত ৯ টা থেকে সকাল ৮ পর্যন্ত চলবে। দিনের বেলায় শহরের এ সমস্ত ট্রাক, লরি ও কার্গো ভ্যান চলবে না।
বাস ও মাইক্রোবাস চলাচল প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, আইদি বা বোগদাদ পরিবহনের বাস বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ার পর নির্দিষ্ট টিকিট কাউন্টার ছাড়া যাত্রী উঠানো যাবে না। মাইক্রোবাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাখা যাবে না। মাইক্রোবাসের কোন স্ট্যান্ড থাকবে না। যেহেতু এটা কোন বাণিজ্যিক পরিবহন না।
জেলা প্রশাসক বলেন, কিছু সিএনজি চালিত অটোরিকশা এবং ইজিবাইক কমাতে হবে। যেসব গাড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। আমি চাই না উপজেলার কোন অটোরিকশা বা ইজি বাইক জেলা শহরে ডুকবে। হয়তো রোগী আনার ক্ষেত্রে সেটা শিথিল করা যেতে পারে।
ইজিবাইক প্রসঙ্গে বলেন, ইজিবাইকের দুটি কালার করতে চাই। আজকে যে কালার চলবে, কাল সেই কালার চলবে না। বৈধভাবে লিস্ট করে কালার করে দিতে হবে। ইজিবাইক যদি অর্ধেক হয়ে যায় তাহলে শহরে যানজট অনেকাংশেই কমে যাবে। তবে অটোরিকশা বা ইজিবাইকগুলো এনলিস্ট করতে হলে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে করতে হবে। কোন অটোরিকশা বা ইজিবাইকের চালকের ডানপাশে কেউ বসতে পারবে না।কোন বাস বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে ওয়্যারলেস বাজারের ২০০ গজ আগে বা পরে স্টপেজ করবে এরপর বাবুরহাটের আগে আর কোন স্টপেজ করতে পারবে না। কোন সিএনজি এবং ইজি বাইকের সামনে ড্রাইভার এর ডান পাশে কোন যাত্রী বসতে পারবে না এবং সিএনজি এবং অটো রিক্সার ডানদিকে যাত্রী উঠানামা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।
পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বক্তব্যে বলেন, আমরা চাঁদপুরবাসীর সেবা করা জন্যেই এসেছি। শহরের বিকল্প সময় বা কালার দিয়ে অটো চলতে হবে। অটোরিকশা গুলো ২ কালার করা উচিত। আমরা আইন প্রয়োগ করছি কিন্ত বেশি গাড়ি থাকার কারণে তা দৃশ্যমান হচ্ছে না। সম্মিলিতভাবে আমরা শহরের যানজট মুক্ত করবো।
সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসন করা। বক্তারা এ শহরের যানজট নিরসনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরেন। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাঁদপুরে ভবিষ্যতে আর কোন সিএনজি, অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না। শহরে চলাচলরত ৩ সহস্রাধিক ইজিবাইককে দুইটি রং এ রঙিন করে প্রতিদিন একটি রঙের অটো বা ইজিবাইক শহরে চলাচলের অনুমোদন পাবে। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজারের অর্ধেক অটো রিকশা একেক দিন শহরে চলাচল করবে। শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে সিএনজি স্ট্যান্ড ( সাবেক বেবী স্ট্যান্ড) সুবিধা জনক স্থানে করা হবে। স্বর্ণখোলা রোডে অবস্থিত বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে বাস ছাড়বে। বাসগুলো মূল শহর পেরিয়ে ওয়্যারলেস এবং বাবুরহাট স্টপেজ ছাড়া রাস্তায় কোন যাত্রী ওঠানামা করাতে পারবে না। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে কোন প্রকার ভ্যানগাড়ি করে কোন প্রকার মালামাল বিক্রি করা যাবে না। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শহরে কোন প্রকার ভারী যানবাহন যেমন ট্রাক লরি বাস ইত্যাদি প্রবেশ করবে না। এ ধরনের যানবাহন রাত ৯ টার পর হইতে সকাল আটটার মধ্যে শহরে ঢুকতে এবং বের হতে পারবে। শহরের বিএনপি অফিসের পাশের সেতু, হকার্স মার্কেটের পূর্ব পাশের সেতু, ঘোষপাড়া এলাকার সেতু প্রশস্ত করণ করতে হবে। ইলিশ চত্বর এবং ওয়ারলেস মোড়ের ভাস্কর্য দুইটির অতিরিক্ত জায়গা অপসারণ করতে হবে। ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
এসময় আরো বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) একরামুল ছিদ্দিক, চাঁদপুর বিআরটিএ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, সাবেক সভাপতি ইকবাল বিন বাশার, ইকবাল পাটওয়ারী,গিয়াসউদ্দিন মিলন,সময় টিভির নিজস্ব প্রতিবেদক ফারুক আহমেদ,পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়া, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক গোপাল সাহা ও ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা সভাপতি এম এ লতিফ, টি আই মো. মাহফুজ প্রমূখ।
সভায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌর প্রসাশন, বাস মালিক সমিতি, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, চাঁদপুর বিআরটিএ র কর্মকর্তাবৃন্দ, সিএনজি মালিক সমিতি, অটোরিকশা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ,বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।