নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) উপাচার্য ড. মো. নাসিম আখতারের পদত্যাগ দাবিতে ফের চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার সকাল ১০টায় থেকে বেলা ২টা বৃষ্টি উপেক্ষা করে চাঁবিপ্রবির ক্যাম্পাস সন্মুখে মহাসড়ক সড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। ৪ ঘন্টা ব্যাপী এই সড়ক অবরোধের ফলে চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে সকল রুটের দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পরে ওই সড়কে যাতে ত্রত বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয় মালামাল আটকে পড়া ভারী যানবাহনের চালকেরা ।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে দুপুর ২ টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থলে ছুটে আসেন।
তাদের মধ্যে ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী মোঃ কর্মকর্তা হেদায়েত উল্লাহ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। ডিসির অপসারণে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে করণীয় সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেন।
উপজেলা নির্বাহী মোঃ কর্মকর্তা হেদায়েত উল্লাহ বলেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সুতরাং একমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতিই তাকে অপসারণের ক্ষমতা রাখেন। আর যদি ভিসি মহোদয় নিজ থেকে পদত্যাগ করেন, তাবে সেটি অন্য কথা। আপনারা ইতোমধ্যে মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে ভিসি মহোদয়ের পদত্যাগের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সেটি আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয় রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রেরণ করেছেন। ইতোমধ্যে বর্তমান সরকারের একজন শিক্ষা উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তিনি দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন। তাই এ অবস্থায় সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া অনুরোধ জানান তিনি। এক পর্যায়ে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে তিন দিনের সময় চান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা গত কয়েকদিন ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করছি। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমরা স্মারকলিপিও দিয়েছি। অথচ জেলা প্রশাসনের কেউ আমাদের সাথে একটু দেখাও করেনি। আজকে সড়ক অবরোধ করায় আপনারা আমাদের কাছে এসেছেন, এ জন্য আমরা আপনাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সবশেষ শিক্ষার্থীদের দাবি সম্বলিত আবেদনের কপি দ্রুতই শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণের জন্য প্রশাসন আশ্বস্ত করেন। তাই আপাতত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
অপরদিকে গত ১০ আগস্ট এক বিবৃতিতে উপাচার্যেরপদত্যাগ দাবি করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাসিম আখতার শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম সুযোগ–সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সারাক্ষণ পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির চাটুকারিতায় ব্যস্ত থাকতেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছেন ভিসি। ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন উপচার্য ড. মো. নাসিম আখতার। শিক্ষার্থীরা অনতি বিলম্বে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
এতেও কোনো সমাধান না হওয়ায় গত বুধবার (১৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেন।
উল্লেখ্য, পদত্যাগের দাবি ওঠার পর থেকেই উপাচার্য আত্মগোপনে রয়েছেন এবং সংবাদমাধ্যমকে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনটি বিষয়ে ১৮০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।