জনগণ যাতে প্রয়োজনীয় তথ্য ওয়েব পোর্টাল থেকে পেতে পারে সেজন্যে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করবো: জেলা প্রশাসক

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥

তথ্যের অবাধ আদানে প্রদানে সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক  মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সরকারি অফিসগুলোতে কোন না কোনভাবে তথ্যের আদান প্রদান হচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি একই সংবাদ একেকজন একেকভাবে উপস্থাপন করছেন। জবাবদিহিতা যেমন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে তেমনি সাংবাদিকদেরও রয়েছে। সাংবাদিক বা সাধারণ জনগণ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য চাইলে অনেকেই দিতে চান না কিন্ত না সরকারি যেকোন প্রকল্পের তথ্য দিতে তারা বাধ্য। চাঁদপুর জেলা ও ৮টি উপজেলার ওয়েব পোর্টালের উপর সনাক-টিআইবি যে স্টাডি করেছে তা খুবই সুন্দর হয়েছে।আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ নেই। তবে আমি আশা করছি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েব পোর্টালের তথ্যগুলো হালনাগাদ করবেন। এ ব্যাপারে আমি একটি নির্দেশনাও দিবো। পাশাপাশি জনগণ যাতে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ওয়েব পোর্টাল থেকে পেতে পারে সেজন্যেও দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করবো। সাধারণ জনগণকেও তথ্য প্রাপ্তির অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি অনুষ্ঠানে আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

“কর্তৃপক্ষের সকল দ্বার খুলে দেবে তথ্য অধিকার” এই শ্লোগান নিয়ে জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)- টিআইবি চাঁদপুরের আয়োজনে গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সকাল ১০টায় “আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস” উপলক্ষে সার্কিট হাইজ থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। র‌্যালি পরবর্তী আলোচনা সভা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

এ বছর দিবসটির মূলপ্রতিপাদ্য বিষয় “রাষ্ট্রের মূলধারায় তথ্য অধিকারের সংযুক্তি এবং সরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ”।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার নিলুফা ইয়াছমিন মিতুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার প্রশাসন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের  জেলা প্রশাসক  ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইয়াছির আরাফাত বলেন, আমাদের তথ্যের কোন ঘাটতি নেই। স্রোতের গতিতে তথ্যের প্রবাহ বেড়ে পাবে এই প্রত্যাশা করছি। বিগত দিনের তুলনায় তথ্য চেয়ে আবেদন করার পরিমান কমে গেছে। আমরা যারা সরকারি অফিসে কর্মরত আছি আমাদের উচিত সাধারণ জনগণ যারা তথ্য নিতে আসে তাদেরকে তথ্য প্রদান করা। তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। তিনি অনুষ্ঠানে আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

সনাক সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠান করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জন্য এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে এই আইনটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। মানুষের চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। মানুষ আগের তুলনায় অনেক সচেতন হয়েছে। আমাদেরকে ভালো কাজগুলো করার চেষ্টা করতে হবে। টিআইবি’র সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শমতে সরকার ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন পাশ করে। তথ্য অধিকার আইনকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য সনাক-চাঁদপুর কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে একেবারে নিন্ম পর্যায় পর্যন্ত সকলের সম্পদের হিসাব প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর দিতে হবে। এতে করে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে। চাঁদপুর জেলা ও ৮টি উপজেলার ওয়েব পোর্টাল স্টাডির তথ্য উপস্থাপন করেন টিআইবি’র এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানা।

এছাড়াও তিনি দিবসের উপর সার্বজনীন তথ্য অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে টিআইবি’র সুপারিশসমূহ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো হলো- বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার নিশ্চিতের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে সকল আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের মত কালো আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট জনগণের ওপর ডিজিটাল নজরদারী কাঠামো নিশ্চিহ্ন করতে হবে, তথ্য কমিশনকে অধিকতর কার্যকর করার স্বার্থে স্বচ্ছপ্রক্রিয়ায় যোগ্য ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ প্রদানসহ এই সংস্থাটিকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে, তথ্যপ্রকাশ ও তথ্যে অভিগম্যতার সুবিধার্থে ডিজিটাল টুলসের ব্যবহার সহজলভ্য ও বকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯Ñ এর পরিপন্থি’ বিদ্যমান আইনসমূহ সংস্কার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাতিল করতে হবে। নতুন কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থি বা আইনটির কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো ধারা যাতে সংযোজিত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে যথাযথ ধারণা ও তথ্য প্রদানে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অর্জনে বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং তথ্য প্রদানে আগ্রহ সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, তথ্য অধিকার আইনের অধিকতর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণমূলক কার্যক্রমে নাগরিক সমাজ, জনগণ ও গণমাধ্যমের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহারে সচেতনতা ও সক্ষমতা সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচার বৃদ্ধির লক্ষ্যে তথ্য কমিশন ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সকল সংস্থার নিজস্ব ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, তথ্যপ্রকাশ ও প্রচারে প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা ও সংগতি পর্যবেক্ষণের জন্য তথ্য কমিশনের ক্ষমতা ও তদারকি বাড়ানোসহ তদারকি কার্যক্রমে নাগরিক সমাজ ও জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, তথ্য অধিকার নিশ্চিতে গণমাধ্যমকে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ, সুশীল সমাজ, তথ্য কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, ‘‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’’ এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, সরকারি মিথ্যাচার এবং এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় সংস্থার অনৈতিক ব্যবহার চিরতরে বন্ধ করতে হবে এবং বস্তুনিষ্ঠ, সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতে কার্যকর নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন বেপারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত। উম্মুক্ত আলোচনা অংশগ্রহণ করেন, প্রফেসর ড. মোঃ ইকবালুর রহমান, চাঁদাপুর সরকারি কলেজ, মোঃ জাহিদ হাসান রিপন, এনজিও কর্মী ও চাঁদপুর সনাকের এসিজি সদস্য বাদশা ভূঁইয়া। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ, সনাক-চাঁদপুরের টিআইবি কর্মীবৃন্দ, এসিজি ও ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ।

Loading

শেয়ার করুন: