
মো. মহিউদ্দিন ॥
শাহরাস্তি উপজেলার জনতা ব্যাংক সুচিপাড়া শাখার অর্থ লোপাট নিয়ে ঘটে যাওয়া সিনিয়র কর্মকর্তাদের আটক ও আত্মহত্যায় উপজেলা ব্যাপি তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আটক হয়েছেন উক্ত শাখার সিনিয়ার কর্মকর্তা জাবেদ হোসেন। তাকে আটকের কয়েক ঘন্টার মধ্যে আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছেন।
জানাযায়, গত কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েক জন গ্রাহকের অজান্তে তাদের একাউন্ট থেকে বিভিন্ন একাউন্টে টাকা হস্তান্তর করেন অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জাবেদ হোসাইন।
মূলত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে গ্রাহক মো. সেলিমের একাউন্ট থেকে ( হিসেব নং – ০১০০০৫৯৮৭৭১০৫) অগ্রণী ব্যাংক ভবানিগঞ্জ শাখা লক্ষিপুর, লুক লেদার সুজ (হিসেবে নং -০২০০০২২৯১১২৭৫) একাউন্টে ১ লাখ টাকা পরীক্ষামুলক হস্তান্তর করেন। এরপর প্রায় ১ মাস ২০ দিন অপেক্ষা করেন। এ সময়ের মাঝে কোন প্রকার সমস্যা না হওয়ায় পরবর্তীতে মাত্র ৩ দিনে আরো ৮৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮ শত ১৪ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করেন।
শাহরাস্তি থানায় জনতা ব্যাংক সুচিপাড়া শাখার ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র ঘোষের অভিযোগের আলোকে জানাযায়, অভিযুক্ত সিনিয়র অফিসার জাবেদ হোসাইন ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে গ্রাহক মো. সেলিমের একাউন্ট থেকে ( হিসেব নং – ০১০০০৫৯৮৭৭১০৫) অগ্রণী ব্যাংক ভবানিগঞ্জ শাখা লক্ষিপুর, লুক লেদার সুজ (হিসেবে নং -০২০০০২২৯১১২৭৫) একাউন্টে ১ লাখ টাকা হস্তান্তর করেন। ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে একই একাউন্ট থেকে ডাস বাংলা পিএলসি খিলগাঁও ঢাকায় মোসা. তানিয়া বেগমের একাউন্টে ( হিসেব নং -২৯২৭৩৪৮৬১৭৮০৪) ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪ শত টাকা হস্তান্তর করেন। একই একাউন্ট থেকে একই তারিখে পূবালী ব্যাংক গোপালগঞ্জ শাখায় সুকান্ত বাড়ই এর একাউন্টে ( হিসেব নং -১৯০০১০১১৬৬২৩৩) ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা হস্তান্তর করেন। ৯ এপ্রিল ২০২৫ একই একাউন্ট থেকে ব্রাক ব্যাংক নিতাইগঞ্জ শাখা নারায়ণগঞ্জে রিফাত প্যাকেজিং ষ্টোর ( হিসেব নং -৪৩০৫২০৫১৫৩৬০০০০১) ১৬ লাখ টাকা হস্তান্তর করেন। একই তারিখে মায়া নূর আক্তারের একাউন্ট থেকে ( হিসেব নং -০১০০০৫৯৯৯৬৩৫০) সিটি ব্যাংক যশোর শাখায় মো. তাসিনের একাউন্টে (হিসেব নং -২১০৪৪৩৪০৫৬০০১) ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ২ শত ১১ টাকা হস্তান্তর করেন। ১০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে এনায়েত হোসেনের একাউন্ট থেকে ( হিসেব নং -০১০০০৫৯৮৬৩৬০১) সিটি ব্যাংক যশোর শাখায় মো. তাসিনের একাউন্টে ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ২ শত ৩ টাকা হস্তান্তর করেন। জাবেদ হোসাইন ৬ ধাপে বিভিন্ন একাউন্টে মোট ৮৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮ শত ১৪ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করেন।
এলাকাবাসীর দাবি, গত কয়েক মাস ধরে ভিন্ন ভিন্ন ধাপে টাকা স্থানান্তরের বিষয়টি কেন জানতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, এতে শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে অবহেলা কিংবা গাফিলতি ছিল নাতো ? এত বড়ো বড়ো লেনদেনে শাখা ব্যবস্থাপকের সম্পৃক্ততার আশংকা করছেন অনেকে। গ্রাহকদের আমানতের টাকা এভাবে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করা হলে গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে বলে জানান অনেকই।