নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
প্রতারণার মামলায় রংপুরের রমজান আলী রাজিবকে (৩৫) চাঁদপুর কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল আমিন এ নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম। রমজান আলী রাজিব রংপুর মহানগরের শালবন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার জাহাংগীর আলমের ছেলে।
বাদী পক্ষের অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম জানান, রমজান আলী চাঁদপুরের প্রথম পরিবেশবান্ধব স্বয়ংক্রিয় কংক্রিট ব্লক উৎপাদন কারখানা প্রিমিয়াম ইকো ব্লকস লিমিটেডের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের দায়ে তার বিরুদ্ধে চাঁদপুরের আদালতে প্রতারণা মামলাসহ দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। মামলা দুটি ইকো ব্লকস লিমিটেডের মালিক হেলাল উদ্দিনের পক্ষে তার ব্যবস্থাপক ও ম্যানেজার বাদী হয়ে চাঁদপুর আদালতে দায়ের করেন।
তিনিও জানান, গত ৪ জুলাই চাঁদপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ সংক্রান্ত পুলিশের পিবিআই-এর তদন্ত রিপোর্ট আমলে নেয় এবং আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বৃহস্পতিবার প্রতারক রমজান আলী রাজিব আদালতে এসে জামিন চাইলে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল আমিন জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী প্রিমিয়াম ইকো ব্লকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো আশ্রাফুজ্জামান মজুমদার জানান, আমদানিকৃত পিএসআই মেশিনের (কংক্রিট ব্লকের মান পরীক্ষা) বদলে রাজিব নিজে কারখানায় তৈরি করে অকেজো ও মানহীন মেশিন সরবরাহ করেন। আমাদের সঙ্গে তার কথা ছিল এটি আমদামি করে দেবে। একই সঙ্গে তিনি বিএসটিআইর অনুমোদন করে দেবে। এটি বিএসটিআইর অনুমোদন তো দূরের কথা ব্যবহার করারও অনুউপযোগী। কংক্রিট গুঁড়ো করার ক্রাশার মেশিন, ব্লক উৎপাদনের মোল্ড এবং মেশিনারিজ সরবরাহের নামে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেন রাজিব। এ বিষয়ে আমরা চাঁদপুর আদালতে দুটি মামলা দায়ের করি। এরমধ্যে ৪০৬/৪২০ ধারার মামলাটি পুলিশের পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। পিবিআইএর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়। এরপর চাঁদপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রাজিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। রাজিবের বিরুদ্ধে চেক ডিজ অনারের অপর মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার এখানেই শেষ নয়। প্রতারক রাজিব নিজেকে রক্ষার জন্যে পরিবেশবান্ধব শিল্প কারখানার উদ্যোক্তা প্রিমিয়াম ইকো ব্লক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন এবং অপর দুটি মামলার বাদির বিরুদ্ধে রংপুরের আদালতে দুটি হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এরমধ্যে একটি মামলা রংপুর পিবিআইএর তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অপর মামলায় হেলাল উদ্দিনসহ তার অপর ২ জন ব্যবস্থাপক জামিনে আছেন।
প্রিমিয়াম ইকো ব্লক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন জানান, রাজিব একটি মেশিনারিজ তৈরির কারখানা স্থাপন করে তার প্রতারণা ব্যবসা শুরু করেন। এরপর অনলাইনে, ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালান। বিদেশ থেকে কম মূল্যে মেশিন এনে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এরপর ২ বছরের গ্যারান্টি থাকবে এমন কথা বলে অর্থ গ্রহণ করে। এরপর মেশিনারিজ সরবরাহে সময়ক্ষেপণ এবং টালবাহানা শুরু করে। বিভিন্ন খরচের কথা বলে তা পরিশোধ করার জন্য চাপ দিয়ে বলে কয়েকদিনের মধ্যেই মেশিন পাঠিয়ে দেব। এর কয়েকমাস পর নিজে না এসে কুরিয়ার সার্ভিসে নিজের তৈরি করা নিম্নমানের মেশিন পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এসব মেশিনের কোনো কার্যক্ষমতা থাকে না। আমাদের এভাবে ব্লক কারখানায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।