মেঘনা বার্তা ডেস্ক ॥
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ড. মোহাম্মদ নাসিম আখতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর চাঁবিপ্রবির কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারের অংশ আবাসিক হল, ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া, যাতায়াতের জন্য বাস ইত্যাদি দিতে তিনি পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ। চাঁবিপ্রবিতে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা খেলাধুলার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি কেবল কোচিং সেন্টারের মতো একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তিন বছরের অধিক সময় তিনি উপাচার্যের পদে থাকলেও বিভাগগুলোতে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক, সহকারি অধ্যাপক নিয়োগ দেননি।
গত ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্করণ আন্দোলনের জন্য ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান করলে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ নাসিম আখতার স্থানীয় ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সাথে মিলিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেয়। সে শুধু বাধা দিয়েই চুপ ছিলো না বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর তথ্য ঘঝও এর কাছে দিয়ে তাকে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা আর আন্দোলন করতে সাহস না করে।
এরপর ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার এইসব স্বৈরাচারী আচরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ও অস্থায়ী রেজিস্ট্রারের করা বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও অস্থায়ী রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করে। কিন্তু উপাচার্য কিছুতেই কর্ণপাত না করার কারণে ১১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে প্রেস কনফারেন্স করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রেস কনফারেন্সের পর ১২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সম্পূর্ন মনগড়া ও বানোয়াট একটা বিবৃতি প্রকাশ করেন।
এজন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ৮জন শিক্ষকসহ ১০-১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ক্যাম্পাসের ভিতরে রেখে ভার্সিটি পুরোপুরি শাটডাউন করে মেইন গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। এই খবর পাওয়ার পর সাথে সাথে চাঁদপুরে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর মেজর ক্যাম্পাসে আসলে তার মাধ্যমে উপাচার্যকে ২৪ ঘন্টার সময় দেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য রাজিও হয় ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করার জন্য। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পার হলে শুরু হয় তার টালবাহানা। সে আবারও নিজের পক্ষে একটা মিথ্যা বিবৃতি দেই এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে নাটক বলে সম্বোধন করে। এমনকি তার বিবৃতিতে সে বলে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাকি নিজের ইচ্ছায় বন্ধি হয়েছে, যেটা সম্পূর্ন একটা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। তার আগেই ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখ রাত ১:৩০ মিনিটে সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করে স্বাক্ষরকৃত চিঠি শিক্ষার্থীদের কাছে হস্তান্তর করে এবং রাত ২:০০ মিনিটে তাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে মুক্ত করে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতি দেখে উপাচার্য বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে এবং সমঝোতা করার প্রস্তাব দেয়। ভুয়া কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক পরিচয়ে যোগাযোগ করে “ভয়েস অফ আমেরিকা” এর একজন প্রতিনিধি এবং সে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সাথে দেখা করানোর কথা বলে ৫-৬জনের একটা টিমকে ঢাকায় ডাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের এই চাল ধরে ফেলে।
এছাড়াও আরো কিছু মহলের মাধ্যমে সে প্রতিদিন সমঝোতার জন্য শিক্ষার্থীদের উপর চাপ প্রয়োগ করলেও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির উপর অটল থাকে।
উপাচার্যের মিথ্যা বিবৃতি ও প্রশাসনের অবহেলার কারণে ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্নারকলিপি জমা দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। স্নারকলিপি দেওয়ার পরেও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে। কিন্তু তারপরও কোন অগ্রগতি না দেখে ১৭ আগস্ট ২০২৪ ও ১৮ আগস্ট ২০২৪ চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে চাঁবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের থেকে প্রতিনিধি দল এসে ২দিনের সময় নিয়ে যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯ আগস্ট ২০২৪ ও ২০ আগস্ট ২০২৪ চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি বন্ধ রাখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ২দিন পার হলেও উপাচার্য পদত্যাগ করে না এবং আবার ২০ আগস্ট ২০২৪ তারিখ রাতে উপাচার্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ২১ আগস্ট ২০২৪ তারিখ রোজ বুধবার সময় চায় তার কাগজপত্র গুছিয়ে নেওয়ার জন্য, উপাচার্য জেলা প্রশাসকের কাছে আরো বলে যে সে ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করবে।
কিন্তু উপাচার্য আবার তার সেই পুরাতন নোংরা খেলা শুরু করে ২০ আগস্ট ২০২৪ তারিখেই। সে তার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে আবার সমঝোতা করার জন্য পাঠাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে। তার কথা এমন ছিল যে, সে সাথে সাথে রেজিস্ট্রারকে পদচ্যুত করবে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়ে সকল দাবি মেনে নিবে। কিন্তু তার এই নোংরা স্বৈরাচারী মনোভাবকে আবার শিক্ষার্থীরা নাকোচ করে।
এখন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী, সকল শিক্ষক ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত এবং তারা রাষ্ট্রপতি মহোদয় ও শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেছে।