
নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেছেন, ‘দুদক প্রতিষ্ঠায় তফসিলে যে কথাগুলো রয়েছে, সেগুলো আমরা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। দুর্নীতির ব্যাখ্যায় কোন বিষয়গুলো আসছে ক্ষমতার অপব্যবহারকেও এখন দুর্নীতি বলা হচ্ছে। আবার যাঁরা সরকারি চাকরি করছেন এবং সাধারণ মানুষকে সেবা দিচ্ছেন, এই সেবা নিতে গিয়ে অনেক সময় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেসব ক্ষোভের কথা সরাসরি নির্ভয়ে বলার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে।’
বুধবার সকালে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ।
সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, ‘সরাসরি অভিযোগ শুনানি হলে কিছু কিছু বিষয় তাৎক্ষণিক সমাধান হবে এবং উপকৃত হবেন। আবার কিছু অভিযোগ ও ক্ষোভ এখানে সমাধান করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা এসব অভিযোগ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মাধ্যমে অনেকগুলো বিষয় সমাধান করার জন্য অনুরোধ জানাব। এর পরেও কিছু অভিযোগ স্থানীয়ভাবে সমাধান হবে না, সেগুলো আমাদের প্রধান কার্যালয়ের কেন্দ্রীয় যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখানে যাচাই-বাছাই কমিটি বিষয়টি অনুসন্ধান করে সত্যতা নির্ধারণ করবে এবং সত্যতা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। সত্যতা না মিললে সেখানেই অভিযোগের সমাপ্তি হবে।’
সচিব বলেন, ‘আপনারা জানেন যে কোনো প্রচেষ্টা এককভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এটি সফল করার জন্য আপনাদের সবার সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। সেবাদাতা ও গ্রহীতা কেউ কিন্তু প্রতিপক্ষ নয়। আমরা সবাই একই সমাজের মানুষ। তাই সবার প্রচেষ্টায় আমরা কীভাবে উন্নতি কারতে পারি সেটি আমাদের কাম্য। প্রত্যাশা থাকবে যঁরা এই গণশুনানির মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারিভাবে সেবা কার্যক্রম করছেন তাঁরা অবশ্যই সচেতন হয়ে যাবেন।’
তিনি আরও বলেন, দুদক আইনে দুর্নীতি দমনের চেয়ে প্রতিরোধের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো কাজ করছে।
এ সময় গণশুনানি এমন আয়োজনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ যত কম আসবে তখন বুঝা যাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমগুলোর কাজ হচ্ছে। গণ শুনানীর এমন আয়োজনের কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনে দুর্নীতির অভিযোগ কমে আসছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সবারই লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। এজন্য সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত গণশুনানির আয়োজন করা হয়। এতে করে সমাজে দুর্নীতি বিরোধী জনসচেতনতা তৈরী হবে। আগামী প্রজম্মের মাঝে দুর্নীতি বিরোধী চেতনা তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, দুর্নীতির প্রতিকারের পাশাপাশি এর প্রতিরোধও করতে হবে। অনুসন্ধান/তদন্ত করে মামলার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করে দুদক দুর্নীতির প্রতিকার নিশ্চিত করছে। আর জেলা প্রশাসন নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে করে যাচ্ছে। যেমন-দুর্নীতি যেন না হয় সেজন্য প্রচার করা, জনগণের প্রাপ্য সেবা সম্পর্কে সিটিজেন চার্টার এর মাধ্যমে তাদের অবগত করা, নাগরিকদেরকে প্রদেয় বিভিন্ন সেবার মান উন্নত করা, অফিসে দুর্নীতি বিরোধী কর্মশালা আয়োজন, সেবা প্রত্যাশী নাগরিক এবং সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তাদের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়ন করা ইত্যাদি।
গণশুনানিতে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধ বিভাগের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন, চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়সহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা,জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, সাধারণ নাগরিক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজন।
গণশুনানিতে ভূমি প্রশাসন, পুলিশ, পার্সপোর্ট, বিআরটিএ, পানিউন্নয়ন বোর্ড, সাব রেজিস্ট্রি শ্রাফিস, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, দলিল নিবন্ধন, শিক্ষা, রেলওয়ে, ইউনিয়ন পরিষদ, পাসপোর্ট, বন বিভাগব্যাংক, শিক্ষা সম্পর্কীত বিভিন্ন দপ্তর, বিআইডাব্লিউটিএ, জেলা পরিষদসহ জেলা/উপজেলা নির্বাচন অফিসসহ মোট ৪৩ টি দপ্তরের মোট ৬৬ টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন কর্মকর্তাবৃন্দ।