সাংবাদিকরা সত্যিটা লিখলে ফ্যাসিবাদ তৈরি হতো না:জেলা প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার ॥

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উৎকর্ষে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০২৪ প্রদান অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো এ আয়োজনে বিচারকদের বিবেচনায় ২০২৪ সালে ৬ জন সাংবাদিক পুরস্কার পেয়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন, পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাও. বিল্লাল হোসেন মিয়াজীসহ অতিথিরা।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০২৪ প্রাপ্তরা হলেন- স্থানীয় পত্রিকার প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য দৈনিক ইল্শেপাড়ের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ, জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান বাবলু, টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদনের জন্য এখন টেলিভিশনের প্রতিনিধি তালহা জুবায়ের ও চ্যানেল-২৪ এর প্রতিনিধি আল-ইমরান শোভন, স্থানীয় পত্রিকার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের নারায়ণপুর প্রতিনিধি মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য দৈনিক চাঁদপুর সময়ের এম. ফরিদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের আমরা সবাই সমিহ করে চলি। আমরা বলি সংবাদপত্র চতুর্থস্তম্ভ। আমাদের চতুর্থস্তম্ভটি কেন এতো ভঙ্গুর। এসময় সাংবাদিকদের প্রতি আস্থা ছিলো। এখন নিউজের তুলনায় ভিউজের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পেশিবাদ তৈরি মূল উৎপত্তি চতুর্থস্তম্ভ থেকে। কারণ তারা সঠিকটা তুলে ধরেননি বিভিন্ন কারণে। সঠিকটা তুলে ধরলে পেশিবাদ তৈরি হতো না। চতুর্থস্তম্ভ হচ্ছে গণতন্ত্রের রক্ষক।

তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা যে কোন ঘটনার আড়ালে তারা অনুসন্ধান করে। ঘটনাটি কি জন্য ঘটছে, তা বের করে আনে। যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের শুভকামনা জানাই। পৃথিবীর এমন কেউ নেই যারা সম্মাননা নিতে পছন্দ করে না। যারা অংশ নিয়েছে তারা সবাই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য, তারা আগামীতে পুরস্কার পাবেন। এরকম সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য প্রেসক্লাবকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, আমাদের ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাং জড়ায়। যারা কিশোর গ্যাং এর সাথে গড়িত তাদের তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা তাদের মুটিভেট করে, যুব উন্নয়নের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে সাবলম্বী করে তুলবো। তাহলেই তারা আর কিশোর গ্যাং এর মতো অপরাধে জড়াবে না। অপরাধ রুটগুলো আমাদের চিহ্নিত করে অপরাধ দমন করতে হবে। মাদক সেবী সমাজের জন্য অনিরাপদ।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আমার মধ্যে কোন ভয় নেই, তাই সাংবাদিকদের ভয় পাই না। যারা অন্যায় করে তারা সাংবাদিকদের ভয় পায়। আমরা সাংবাদিকদের নিয়ে অনেক ট্রল করি, সাংবাদিক আসলে সাংঘাতিক। আমি মনে করি চাঁদপুর জেলায় সাংঘাতিক নেই, সবাই সাংবাদিক।

বিশেষ অতিথি বক্তব্যে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, আমি যেদিন চাঁদপুর আসি ঐদিন সকলের কথাগুলো শুনে, অত্যন্ত গঠনমূলক কথা ছিল সেগুলো শুনার পর আমি আমার কাজ করতে শুরু করি। একটা বিষয় আমার কাছে মনে হয়েছে, চাঁদপুর প্রেসক্লাব প্রত্যেক সাংবাদিকের জন্য একটি ঐতিহ্য। এই যে এতো সুন্দর একটি নির্বাচন হয়েছে, কোনো ঝামেলা বিহীন ছাড়াই, এতো সুন্দরভাবে হয়েছে যা বলা বাহুল্য।

তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে আজকে যারা পুরস্কৃত হয়েছেন, আমি এদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। চাঁদপুর প্রেসক্লাব নতুন মেম্বারসহ সকলকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই সাংবাদিকদের মাধ্যমেই আমরা অনেক নিখুঁত তথ্য পেয়ে থাকি। এই জন্য বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য তিনি ধানবাদ জ্ঞাপন করেন।

বিশেষ অতিথি বক্তব্যে জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমাদেও নেত্রীর মুরালটি এখনো অক্ষত রেখেছে। তারা বেলেছিলো মুরালটি সংরক্ষণ করবে, দেখলাশ মুরালটি সংরক্ষণ হয়েছে। আমরা সবাইকে ধালাও ভাবে দোষারোপ না করে, আমরা দোষগুলো ভুলে যেতে চাই। কারণ পরিস্থিতি এরকম হয়ে গেছে যে যিনি বিচার করবেন তিনি শেখ হাসিনা ও তার বাবার ছবি নিয়ে প্রগ্রোমে দাঁড়াতে হবে। তাদের মৃত্যু বার্ষিকী, জন্ম বার্ষিকী সহ সকল অনুষ্ঠানে পালন করতে বাধ্য করেছে।

তিনি আরো বলেন, সবার বুকে এখন শক্তি আছে যার যার আদর্শে চলার। চাঁদপুরে সাংবাদিকদেও উপর ক্ষোভ ও কষ্ট থাকলে আমার থাকতে পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে একজন সাংবাদিককে আমার বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সাংবাদিকদের কলম আটকে রেখেছেন, তারা লিখতে পারেনি। আমরা সাংবাদিকদের লেখার অধিকার দেই। সাংবাদিকদের সহযোগিতা করলে আমার বিশ্বাস অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। সাংবাদিকরা যদি লেখে সেই লেখার ক্লু ধরে বিচার পক্রিয়া হয়, আমাদের দেশের অনেক কিছুর সমাধান এখানেই হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ সবাই যে ভাবে বলেছে, আপনারা আপনাদের লেখনির মাধ্যমে প্রমান করেন অন্তত চাঁদপুরে ইউলো জার্নালিজম বলে যে শব্দ, সেই শব্দটা আর থাকবে না। তাতে চাঁদপুরবাসী যেরকম উপকৃত হবে, তার সাথে আমরা যারা রাজনীতি ব্যক্তিক্ত আছি এবং প্রশাসনের লোকজন সবাই উপকৃত হবে।

বিশেষ অতিথি বক্তব্যে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাও. বিল্লাল হোসেন মিয়াজী বলেন, সাংবাদিকদের কথা যদি বলি, তাহলে সাংবাদিকরা হলো সমাজের একটি চিত্র। এজন্য সঠিক সাংবাদিকতা হলো দায়িত্বশীলতার সাথে সঠিক তথ্য প্রচার করা। যখন জাতি দেশ ও জনগনের পক্ষে অবস্থান নেয়, যখন দেশকে বিক্রি করার জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে একদল সাংবাদিক ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, এটা কেমন সাংবাদিকতা ? তাই এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। দেশ ও জাতির জন্য সাংবাদিকগণ কাজ করবে এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করবে সাংবাদিকরা। সরকার আসবে সরকার যাবে কিন্তু জনগণ থাকবে। সাংবাদিকরা সঠিকটা তুলে ধরবে এটাই জনগণেন চাওয়া।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০২৪ সালের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্তের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০২৫ সালের সভাপতি রহিম বাদশা।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০২৪ সালের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমনের পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী অ্যাড. শাহাজাহান মিয়া, দৈনিক চাঁদপুর শপথের সম্পাদক কাদের পলাশ, দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাড. ইকবাল বিন বাশার, দৈনিক চাঁদপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, দৈনিক চাঁদপুর দর্পনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুনির চৌধুরী, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শোয়েবুর রহমান, চাঁদপুর জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর পিপি অ্যাড. কোহিনূর রশিদ, জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কাজী রাসেল, পৌর জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাড. শাহজালাল খান, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মারজুক মুঈদ, দৈনিক চাঁদপুর খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদী, দৈনিক প্রভাতী কাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুল আউয়াল রুবেল, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি রিয়াদ ফেরদৌস, চাঁদপুর জেলা ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাওন পাটওয়ারী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথি ও সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০২৪ প্রাপ্তদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এরপর চাঁদপুর প্রেসক্লাবের থিমসং পরিবেশনা করা হয়। সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়।

Loading

শেয়ার করুন: