হাজীগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে কৃষকের ৫৬ বস্তা আলু লুট!

হাসান মাহমুদ:

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে দাবিকৃত ১ লাখ টাক চাঁদা না দেওয়ায় কৃষকের বিক্রিকৃত ৫৬ বস্তা আলু জোরপূর্বক লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের তারাপাল্লা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী কৃষক ওই গ্রামের হায়দার আলী প্রধানীয়া বাড়ির মৃত আলী আকবরের ছেলে মো. শাহাজান প্রধানীয়া (৫০)। এর আগে কৃষক শাহাজানের কাছে গত ১৯ জানুয়ারী ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।

ওই সময়ে চাঁদার টাকা না দেওয়ায় দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা করে কৃষক শাহাজানের মালিকানাধীন হ্যান্ড ট্রাক্টরটি ভাংচুর ও চালক আলামিনকে মারধর করে ট্রাক্টরের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায়। এতে তিনি প্রায় ৮০ হাজার টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হন। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসলে তার উপর হামলা, মারধর ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন এবং কৃষক শাহাজানের মাথায় ৫টি সেলাই দিতে হয়।

এই ঘটনায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন কৃষক শাহাজান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এবং চাঁদার টাকা না দেওয়ায় গত ১১ মার্চ মঙ্গলবার বেপারীর কাছে বিক্রিকৃত ৫৬ বস্তা আলু জোরপূর্বক লুট করে নিয়ে যায়। বুধবার সংবাদকর্মীদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কৃষক। এসব ঘটনায় তিনি পাশ^বর্তী এলাকার কচুয়া উপজেলার আয়মা আরব আলী মিয়াজী বাড়ির মুজাম্মেলকে (৩৫) দ্বায়ী করেন।

তিনি অভিযুক্ত মুজাম্মেলসহ ৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। তারা হলেন, কচুয়া উপজেলার একই বাড়ির ইছমাইল (৩০), মহসিন (২৫), মিশু (২৩), মালেক (৫০) ও হাজীগঞ্জের তারাপাল্লা কাজী বাড়ির হানিফ (৩০)। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মুজাম্মেলের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তার পক্ষে জহির নামের একজন বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি আলু নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

৫৬ বস্তা নয়, ৪৭ বস্তা আলু নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মুজাম্মেলের পক্ষে জহির বলেন, ট্রাক্টরে জমি হাল-চাষ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে শাহাজান ও তার লোকজনের হামলায় মুজাম্মেলসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় অভিযোগ হলে এবং ওই অভিযোগের আলোকে সালিশি বৈঠকে ক্ষতিপূরণ বাবদ শাহাজানের ১ লাখ টাকা জরিমানার মাধ্যমে মিমাংসা হয়। তিনি সালিশি বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে চলে আসেন।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে তিনি (শাহাজান) বাড়িতে এসে ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে উল্টো মুজাম্মেলদের হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। যার কারণে তার ৪৭ বস্তা আলু আটক করা হয়েছে এবং এই আলু কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়নি, প্রকাশ্যে সবার সামনে রাখা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে তার আলু নিয়ে যেতে।

আলুর ক্রেতা বেপারী আব্দুল কাদের বলেন, আমি ৯৫ হাজার টাকা দিয়ে কৃষক শাহাজানের আলুর ক্ষেত ক্রয় করেছি। মঙ্গলবার আমি লেবার (শ্রমিক) নিয়ে যখন ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলন করে বস্তায় ভরেছি, ঠিক তখনি রড, লাঠি-সোটা নিয়ে ২০/৩০ জন লোক এসে আমাদেরকে গালমন্দ করে জোরপূর্বক আলুর বস্তাগুলো নিয়ে যায়।

মামলার বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাজহারুল হক বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এসেছি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আদালতে মামলার বিষয়ে তদন্তে গিয়েছি, আলুর বিষয়ে যাইনি।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Loading

শেয়ার করুন: