
হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি :
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বলাখাল জেএন হাই স্কুল এন্ড করিগরি কলেজ কেন্দ্রের সামনে থেকে ফিল্মি স্টাইলে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার (২৭ এপ্রিল) দিবাগত রাতে নির্যাতনের শিকার এক শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে হাজীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
জানা গেছে, বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম ও রায়হান। রোববার তারা হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বলাখাল জেএন হাই স্কুল এন্ড কারিগরি কলেজের কেন্দ্রে ফিন্যান্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। দুপুরে পরীক্ষা শেষে তারা বের হয়ে বাড়ির ফেরার উদ্দেশ্যে যানবাহনের জন্য দাঁড়ায়।
এসময় পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের ধেররা এলাকার জনিসহ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদেরকে ধরে নিয়ে মারধর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা নিজ বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যদেরকে জানায়। পরে তাদেরকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে রোববার রাতেই নির্যাতিত এক শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর সোমবার তদন্ত কাজ শুরু করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার বিকেলে বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় ধেররা বনাম বাকিলা এলাকার দুইটি দলের মাঝে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ধেররা পক্ষে খেলতে আসা একজনের সাথে বাকিলা এক যুবকের সাথে পুরানো কোন এক বিষয় নিয়ে খেলার মাঠে তর্ক-বিতর্ক হয়।
ওই তর্ক-বিতর্কের জেরে রোববার পরীক্ষা শেষে বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা শেষে বলাখাল জেএন হাইস্কুল এন্ড কারিগরি কলেজ কেন্দ্রের বাইরে থেকে পৌরসভাধীন ধেররা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদেরকে আটকে রেখে বেদম প্রহার করে। এতে তারা গুরতর আহত হয়।
আহত শিক্ষার্থী ফাহিম জানান, খেলার মাঠে কি হয়েছে তা আমি জানিই না। অথচ পরীক্ষা শেষে জনিসহ ৪ জনে মিলে আমাকে জোরপূর্বক সিএনজিতে করে ধেররা নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আরো কয়েকজনকে ফোন করে তারা ৮/১০ জন জড়ো হয়। এর পরেই তাদের একজনের কোমরের বেল্ট খুলে আমাকে বেদম মারধর করে।
শিক্ষার্থী বলেন, এ সময় কয়েকজন মুরুব্বী আমাকে মারধর করার বিষয়টি দেখে তাদের হাত থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে সিএনজিতে তুলে বাকিলা পাঠিয়ে দেয়।
বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, কোন কারণ ছাড়াই আমাদের দুই পরীক্ষার্থীকে ধেররাতে নিয়ে মারধর করেছে। এতে আমার অন্য পরীক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব খোদেজা বেগম জানান, বিষয়টি বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। আমি পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলেছি। জানতে পেরেছি, এক শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে হাজীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।