হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্বচ্ছল রোগীর মূত্রথলির পাথর অপারেশন

 

হাসান মাহমুদ ॥

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অস্বচ্ছল পরিবারের মনির (৩৫) নামে এক যুবকের মূত্রথলির পাথর অপারেশন করা হয়েছে। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মূত্রথলি থেকে প্রায় ৩০০ গ্রামের পাথর অপারেশনের পাশাপাশি তাকে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়া হয়।

অপারেশনকৃত ওই রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে এবং তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছেন। মনিরের বাড়ী কচুয়া উপজেলার জগতপুর এলাকায়।

এদিকে বিষয়টি জানার পর হাসপাতালে আগত রোগি ও তাদের স্বজনসহ স্থানীয় ও এলাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। নিয়মিত সিজারের পাশাপাশি গত ৯ ডিসেম্বর অস্বচ্ছল পরিবারের এক ব্যক্তির মূত্রথলির পাথর এবং অপর এক ব্যক্তির এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পাশাপাশি তাদেরকেও সরকারিভাবে বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানভীর হাসানের (ইউএইচএফপিও) সার্বিক তত্ত্বাবধানে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করেন, মেডিকেল অফিসার ও ইউরোলজিস্ট ডা. মো. মমিনুল হায়দার এবং মেডিকেল অফিসার ও নিউরোসার্জন ডা. মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম। এর আগে রোগীদের অজ্ঞান কার্যক্রম পরিচালনা করেন, মেডিকেল অফিসার ও এনাস্থেসিস্ট ডা. আবিদা সুলতানা।

এছাড়াও অপারেশন টিমে ছিলেন, মেডিকেল অফিসার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞা ডা. মোহাম্মদ মহিবুল আলম রুবেলসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সেবিকা (নার্স)। কথা হয়, চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তির সাথে। তিনি চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এতো ভালো চিকিৎসা হাসপাতালে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) পাবো, তা কখনোই ভাবেন নি। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানভীর হাসানের সাথে। তিনি ওটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অপরাশেনকৃত ব্যক্তি সুস্থ আছেন এবং ভালো আছেন।

তিনি বলেন, মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সুবিধায় ইতোমধ্যে চাহিদার প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতির পেয়ে আগের চেয়ে একটু বেশি সেবা দিতে পারছি। সেবার মান বৃদ্ধি করতে আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি। আশাকরি, আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি, তাহলে স্বপ্নের স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে যাবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের পর ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার হয়নি। এতে করে অ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র, ডায়াথার্মি মেশিন, সাকার মেশিন, হাইড্রোলিক ওটি টেবিল, অটোক্লেভ যন্ত্র, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি), স্ট্যান্ডবাই ওটি ও সিলিং লাইট, স্টাবিলাইজারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক লাইন অকেজো ও অপরাশেনের বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়।

২০২২ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসাবে ডা. মো. গোলাম মাওলা নঈম যোগদানের পরেই নজর দেন অপারেশন থিয়েটারের দিকে। প্রথমেই তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে অপারেশন থিয়েটার চালুর ব্যবস্থা করেন। এক এক করে সকল সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ওই বছরের ১৪ আগষ্ট রাখি সাহা নামের একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর সিজারের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটারটি চালু করা হয়।

এরপর থেকে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারি, সিজার, হার্নিয়াসহ যে সকল অপারেশন সম্ভব, তা করা হচ্ছে। বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর এবং সেবার মান ভালো হওয়ায় আশপাশের উপজেলার রোগীরাও আসছেন এ সরকারি হাসপাতালে। এতে করে প্রতিনিয়ত সেবাগ্রহিতার সংখ্যা বাড়ছে।

Loading

শেয়ার করুন: