কোটা আন্দোলন: বিয়ের আট মাসেই বিধবা মুক্তা

 

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥

পৃথিবীতে আসার আগেই বাবাকে হারাল এক অনাগত সন্তান। বিয়ের মাত্র আট মাসেই স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হলেন স্ত্রী মুক্তা আক্তার। আর সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যান মা রশিদা। পুলিশের গুলিতে নিহত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের মৈশামুড়ার আব্দুল হান্নানের পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের মৈশামুড়ার আব্দুল হান্নান পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ৫ ভাই ১ বোনের মধ্যে আব্দুল হান্নান সবার ছোট। মাত্র আট মাস হলো বিয়ে করে নতুন বধূকে ঘরে তুলেছিল। হান্নানের সাত মাসের স্মৃতি নিয়ে কাঁদছেন স্ত্রী আর মা-বাবা। তার স্ত্রী এখন অন্তঃসত্ত্বা।

গত ১৮ জুলাই ২৮ বছর বয়সে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আব্দুল হান্নান। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের মৈশামূড়া গ্রামের বড় বাড়ির আমিন মিয়ার ছেলে। তিনি ঢাকার উত্তর বাড্ডায় বেকারির লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুক্তা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গুলি খাওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোনে কথা হয় হান্নানের সঙ্গে। সে বলেছে এখন দেশের অবস্থা ভালো না। টাকা পাঠানো যাবে না। নুনাসের কাছ থেকে টাকা এনে বাজার করিও পরিস্থিতি ভালো হলে টাকা পাইবা। আর বলেছিল বাসায় গিয়ে কথা বলব; কিন্তু কথা হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে ফোন আসে হান্নান মারা গেছে।

নিহতের বাবা আমিন ও মা রশিদা বেগম  জানান, আমরা জেনেছি; ওই দিন মার্কেটিংয়ের কাজ শেষে মধ্য বাড্ডা হয়ে কারখানায় ফিরছিলেন আব্দুল হান্নান। এ সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। একদিকে পুলিশ অপরদিকে হামলাকারীরা। মাঝখানে পড়ে যান হান্নানসহ একাধিক ব্যক্তি।

এ সময় গুলি ও ইট-পাটকেলের আঘাতে গুরুতর আহত হন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে আব্দুল হান্নানসহ ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। পরে পুলিশ নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে হাসপাতাল থেকে মরদেহ বুঝে পেয়ে হাজীগঞ্জে তার দাফন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ নেতা সুমন  জানান, নিহত আব্দুল হান্নান ধার্মিক ছিলেন। তিনি সততার সঙ্গে জীবন-যাপন করতেন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তিনি গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলাল জানান, হান্নানের এমন মৃত্যু আমাদের প্রত্যাশা ছিল না। তিনি একজন ভালোমনের মানুষ ছিলেন। আমরা তার পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি।

Loading

শেয়ার করুন: