চারতলার বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল নাঈমা, সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কারও হাতে রক্তাক্ত কাপড়, আবার কারও হাতে পড়ার বই। এসব দেখে থেমে থেমে কান্না করছেন নাঈমার স্বজন ও প্রতিবেশীরা। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাজধানী ঢাকার উত্তরায় নিজ বাসার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান স্কুলছাত্রী নাঈমা। এর মাঝে ৮ দিন পেরিয়ে গেছে, তারপরও স্বজনদের আহাজারি থামেনি।

 
নাঈমার মা আইনুন নাহার বলেন, ‘চারতলা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল নাঈমা। কিন্তু সেখানেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আমাদের মেয়ে মারা যায়।’
 
মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না নাঈমার বাবা-মা। চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু দেখে বারবার অচেতন হয়ে পড়ছেন মা আইনুন নাহার। একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেই আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। চাঁদপুরের মতলব উত্তরের আমুয়াখান্দা উত্তরপাড়ায় নাঈমার গ্রামের বাড়ি। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
 
নাঈমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়। নাঈমার বাবা চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা দেওয়ান বলেন, ‘সন্তানদের মানুষ করতে গ্রাম থেকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মেয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসলো। এর দায় কার?’
 
গোলাম মোস্তফা গ্রামের বাজারেই রোগী দেখেন। আর তার স্ত্রী আইনুন নাহার সন্তানদের নিয়ে উত্তরার ৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়ির চারতলায় ভাড়া থাকতেন।
 নাঈমার বাবা আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। চোখের পলকে আমাদের মেয়ে হারিয়ে গেল।’ একপর্যায়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা গোলাম মোস্তফা।
 
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সন্তানের মরদেহ কাঁধে নেব, তা কখনও ভাবিনি। কিন্তু কেন আমার সন্তান গুলিতে মারা গেল। তার কী কোনো বিচার পাবো?
 
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে মা আইনুন নাহার বলেন, ‘বাসার সামনের সড়কে ঝামেলা হচ্ছিল। তা দেখতে আমরা বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার মেয়ের মাথায় গুলি লাগে। মেয়ে সেখানেই রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ে।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘এমন নির্মম মৃত্যু শুধু কী আমার মেয়ের জন্যই নির্ধারিত ছিল। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই। আর এভাবে যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’
 
 
নাঈমার মামাতো ভাই মো. ফাহিম বলেন, ‘ঘটনার পর ঢাকা থেকে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নাঈমাকে দাফন করা হয়েছে।’ 

Loading

শেয়ার করুন: