গোসল জানাজা ও কাফন ছাড়াই কবর দেয়া হয়েছিল সোহেলকে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে প্রবাসে মৃত্যু হওয়া এক যুবকের লাশ ৬৯ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। ওই যুবকের লাশ অনেকটা গোপনেই দাফন করা হয়। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেনি যুবক সোহেলের মা পেয়ারা বেগম। অবশেষে মায়ের অভিযোগে আদালতে নির্দেশে দাফনের ৬৯ দিন পর কবর থেকে ওমান প্রবাসী এই যুবকের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।

২৪ জুলাই বুধবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতা আফরিনের উপস্থিতিতে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার চরবসন্ত গ্রাম থেকে এ লাশ উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের পর ফুলপ্যান্ট পরিহিত অবস্থায় লাশটি দেখা যায়। এর আগে গোসল ও তাফন ছাড়াই সোহেলকে কবর দিয়ে রাখা হয় ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও গোসল এবং জানাজা না দিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করা হয়েছিল সোহেল নামে ওই যুবকের লাশ। এদিকে, লাশটি উত্তোলনের পর ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।

সোহেলের স্বজনরা জানান, চরবসন্ত গ্রামের মৃত আব্বাস হাজীর ছেলে মো. সোহেল তার চাচা মো. বাচ্চুর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর আগে মধ্য প্রাচ্যের ওমানে যান। সেখানে যাওয়ার পর তার চাচা ও চাচার শ্যালকসহ একত্রে একই কোম্পানিতে কাজ করার সুবাদে একই রুমে বসবাস করত। সেখানেই চাচার শ্যালক ফয়সালের সাথে সোহেলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই বিরোধের জের ধরে গত ৬ মে বাচ্চু ও ফয়সাল একত্রে মিলে সোহেলকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। কিন্তু ঘটনাটি তারা ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে সোহেলের মারাত্বক অসুখ হয়েছে বলে সোহেলের বড় চাচা শাহাজাহানকে ফোনে জানায় তারা। শুধু তাই নয় সোহেলকে ওমান থেকে বাংলাদেশে এনে চিকিৎসা করাতে হবে তাই সোহেলের মায়ের স্বাক্ষর একটি সাদা কাগজে দিয়ে তাদের দেওয়া ইমেইলে পাঠাতে বলে তারা। সরল বিশ্বাসে সোহেলের মা পিয়ারা বেগম ছেলেকে বাঁচাতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে ইমেইলে পাঠিয়ে দেন।

এর ১১ দিন পর অর্থাৎ ১৭ মে বাচ্চু সোহেলের লাশ নিয়ে তারা গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। সুচতুর বাচ্চু তার লোকজন নিয়ে ওই লাশের জানাজা না পড়িয়ে ও লাশ গোসল না করিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করার উদ্যোগ নেয়।

এসময় সোহেলের মা পিয়ারা বেগম, বড় চাচা শাহাজাহান, একমাত্র ভাই সোহাগসহ বাড়ির অন্যান্যরা শেষ বারের মতো সোহেলের মুখটি দেখতে চাইলে তা দেখাতেও অস্বীকৃতি জানায় বাচ্চু। শেষে চাপের মুখে পড়ে সোহেলের মৃতদেহটি দেখতে দেয়া হয়। এসময় সোহেলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমখমের চিহ্ন দেখা যায়। কিভাবে সোহেলের মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে বাচ্চু বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছে। কখনো বলেছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে, কখনো বলেছে স্ট্রোক করে মারা গেছে, কখনো বা বলেছে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে।

এদিকে স্থানীয় গণ্যমান্য বিষয়টি নিয়ে শালিসী বৈঠকে বাচ্চু সোহেলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আড়াই লক্ষ টাকা দিবে বলে স্বীকার করে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের ওই টাকা তিন মাস পরে দিবে বলে সে একটি ব্যাংক চেক ও স্বাক্ষর যুক্ত একটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রদান করেন। এর কিছুদিন পর জোরপূর্বক তার কাছ থেকে ব্যাংক চেক ও স্বাক্ষর যুক্ত একটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প নেয়া হয়েছে দাবি করে বাচ্চু তা উদ্ধারের জন্য চাঁদপুর আদালতে একটি মামলা করে।

এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ সোহেলে লাশ তুলে ময়না তদন্তের জন্য আবেদন করলে আদালত তাতে সায় দেন । এরপর ২৪ জুলাই বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতা আফরিনের উপস্থিতিতে চরবসন্ত গ্রাম থেকে এ লাশ উত্তোলন করার পর পোস্ট মর্টেমের জন্য চাঁপুর প্রেরণ করে পুলিশ।

Loading

শেয়ার করুন: