চাঁদপুরে ধর্ষণ – হত্যা মামলায় ৪ জনের ফাঁসির আদেশ

মাসুদ রানা ॥

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের রাসুলপুর গ্রামে গৃহবধূ রহিমা আক্তারকে (২০) ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯(১)৩০ ধারার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। উভয় সাজা একই সঙ্গে চলমান থাকবে।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস চৌধুরী এ রায় দেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সাইয়েদুল ইসলাম বাবু এ তথ্য জানিয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-মো. জিয়া (৩২), কামাল মিয়াজী (৩৬), মো. আবুল বাসার (৪৮) ও মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম (৩৮)।

হত্যার শিকার রহিমা আক্তার রসুলপুর গ্রামের মো. সফিউল্লাহ মিয়াজীর মেয়ে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. জিয়া রসুলপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হক মাস্টারের ছেলে, কামাল মিয়াজী আবুল খায়ের মেয়াজীর, আবুল বাসার আব্দুল জলিলের ছেলে এবং মাহমুদা বেগম নজরুল ইসলামের স্ত্রী।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালে রহিমা বেগমের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ঘিলাতলী গ্রামের মান্না মাস্টারের ছেলে আবু জাফরের বিয়ে হয়। বিয়ের পর রহিমার বাবা-মা জানতে পারেন আবু জাফর একাধিক মেয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত। সর্বশেষ গৌরিপুর এলাকার হালিমা নামে একটি মেয়ের সঙ্গে তার পরকীয়ার কথা জানতে পারেন রহিমা। এই নিয়ে আবু জাফর ও রহিমার মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মে রহিমা তার বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর কর্মস্থল নারায়ণপুর কোল্ড স্টোরে যান। বাবাকে বলে যান রাতে বাড়িতে ফিরে আসবেন। কিন্তু রাতে আর ফিরে আসেননি। পরদিন ২০ মে রহিমার বাবা জামাতা আবু জাফরকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে রহিমা তার কাছে আসেনি। এরপর ২১ মে সন্ধ্যা আনুমানিক পৌনে ৭টার দিকে জামাতা আবু জাফর ফোন করে জানান রসুলপুর কদম আলীর বাড়ির পাশে আক্তারের ভুট্টা ক্ষেতে একটি মেয়ের মরদেহ পড়ে আছে। রহিমার বাবা মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। এরই মধ্যে জামাতা আবু জাফর ঘটনাস্থল থেকে কেটে পড়েন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে মতলব থানায় নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় রহিমার বাবা মো. সফিউল্লাহ মিয়াজী মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি চলমান অবস্থায় তদন্ত করে হত্যা ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত মো. জিয়া, কামাল মিয়াজী, মো. আবুল বাসার ও মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগমকে অভিযুক্ত করে ২০১৩ ৩১ আগস্ট মতলব দক্ষিণ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) লুৎফুর রহমান আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

সরকার পক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সাইয়্যেদুল ইসলাম বাবু বলেন, মামলাটির দীর্ঘ প্রায় ৮ বছরে ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্যপ্রমাণ ও নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে আদালত এ রায় দেন। তবে রায়ের সময় আসামিদের মধ্যে মাহমুদা বেগম পলাতক ছিলেন।

মামলার রায় চলাকালীন বাদী রহিমার বাবা মো. সফিউল্লাহ মিয়াজী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে নির্যাতন করে তারা হত্যা করেছে। মেয়েকে তো আর পাব না। কিন্তু আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। রায় কার্যকর হলে আমার পরিবার শান্তি পাবে।

সরকার পক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ছিলেন খোরশেদ আলম শাওন এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. সফিকুর রহমান ভুঁইয়া।

Loading

শেয়ার করুন: