মতলবের নায়েরগাঁও-পিতামবর্দী সড়ক যেন মরণ ফাঁদ

গোলাম সারওয়ার সেলিম:

সড়কটির পিচঢালাই উঠে গেছে অনেক আগেই। সরে গেছে ইট, বালু, খোয়া। এর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টি হলে সেখানে পানি ও কাঁদা জমে তৈরি হচ্ছে খানাখন্দের। দেবেও গেছে বেশ কিছু অংশ। সংস্কারের অভাবে সড়কটিতে যানচলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। তবু ঝুঁকি নিয়েই চলছে যান। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

এটি মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও দক্ষিণ ও নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নের মধ্যকার নায়েরগাঁও- পিতামবর্দী সড়কের চিত্র। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে এলাকাবাসীর উদ্যোগে সড়কটি বানানো হয়। ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১২ ফুট চওড়া সড়কটি ২০০৪ সালে পাকা হয়। এরপর প্রায় ১৫ বছর ধরে এটি সংস্কারহীন।

সম্প্রতি ওই সড়ক ঘুরে দেখা যায়, এর নায়েরগাঁও, আধারা, নাউজান, নন্দীখোলা, কাচিয়ারা ও পিতামবর্দীসহ আরও কয়েকটি স্থানে পিচঢালাই উঠে গেছে। সড়ক থেকে সরে গেছে ইট, বালু ও খোয়া। সড়কের অন্তত ৩০-৩৫টি পয়েন্টে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কোনো কোনো গর্তে বৃষ্টির পানি ও ময়লা-কাদা জমে তৈরি হয়েছে খানাখন্দের। এর কয়েকটি জায়গা দেবে গেছে বিপজ্জনকভাবে। সংস্কার না হওয়ায় এতে যান চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবু ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। ওই সড়কপথে পথচলাও কষ্টকর। এতে চলতে গিয়ে যাত্রী ও এলাকাবাসীকে পোহাতে হচ্ছে হাজারো দুর্ভোগ।

ওই সড়কপথে নিয়মিত চলাচলকারী আধারা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসহাক গাজী এবং কাচিয়ারা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সফিকুর রহমান বলেন, এ সড়কপথে আধারা, নাউজান, পেয়ারীখোলা, নন্দীখোলা, কাচিয়ারা ও নায়েরগাঁওসহ আরও তিন-চারটি গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার লোক চলাচল করে। এ ছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ১৪-১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছয়-সাত হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত যাতায়াত করে। ভাঙাচোরা ও বিধ্বস্ত এ সড়কটি গত প্রায় ১৫ বছর ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না। বেহাল অবস্থার কারণে সড়কটিতে যাতায়াত করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ১৫-২০ মিনিটের পথ পেরোতে লাগে ৪০-৫০মিনিটি। ভাড়াও গুণতে হয় দ্বিগুণ।
তাঁরা আরও বলেন, এবড়ো-থেবড়ো এ সড়কে গাড়িতে উঠলেই সমস্ত শরীরে ঝাঁকুনি লাগে। গর্তের মধ্যে মাঝে মাঝে গাড়ি আটকে যায়। দেবে যাওয়া অংশে প্রায়ই গাড়ি কাত হয়ে যায়। দুর্ঘটনার ভয়ে সারাক্ষণ তটস্থ থাকতে হয়। তাঁরা অভিযোগ করেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় এলজিইডি কার্যালয়ে একাধিকবার জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।

ওই সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. শুক্কুর আলী বলেন, উপজেলা সদর থেকে জেলার কচুয়া উপজেলা এবং কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা হয়ে ঢাকা, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামে যাতায়াতের সহজ মাধ্যম হচ্ছে এ সড়কটি। এটি কিছুটা আঞ্চলিক মহাসড়কের মতোই। সড়কটিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার), পিকআপ ভ্যান, ট্রাক ও মাইক্রোবাসসহ হালকা ও ভারী সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এটি ঠিক করা হচ্ছে না। এর কয়েক গজ পরপর গর্ত ও খানাখন্দ। অনেক অংশে ইট-বালু ও খোয়ার অস্তিত্ব নাই। গাড়ি চালানো বিপজ্জনক। তবু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাই। খারাপ সড়কের কারণে মাঝে মাঝে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ছে। হতাহত হচ্ছে যাত্রীরা।

উপজেলার কাচিয়ারা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির চার-পাঁচজন শিক্ষার্থী মন্তব্য করে, ‘এই রাস্তা দিয়া প্রতিদিন আমাগো স্কুলে যাওয়া-আসা করতে অয়। রাস্তা ভাঙাচোরা হওয়ায় গাড়িতে উঠলে অনেক ঝাঁকুনি লাগে শরীরে। গাড়িতে উঠলে দুর্ঘটনার ভয়ে মনে মনে শুধু আল্লাহ্রে ডাকি। এই রাস্তা ঠিক করার মতো কি কেউ নাই?

নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান সেলিম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক কুমিল্লার জনৈক হাসানকে এ সড়কের কাজ করার জন্য একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হলেও তিনি কোনপ্রকার গুরুত্ব দেননি। বিষয়টি তৎকালীন মন্ত্রীকে অবহিত করা হলে তিনিও কাজটি সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। তারপর আজও এ সড়কের সংস্কার কাজ করা হয়নি। এতে জনগণের যাতায়াতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির দুই কিলোমিটার ভালো। বাকিটার অবস্থা খারাপ। খারাপ অংশটুকুর সংস্কারের জন্য এক কোটি ৮৫ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। টেন্ডার হওয়ার পর সংশিষ্ট ঠিকাদার সংস্কারকাজ শুরু করেছে। তবে তাঁর কাজের গতি মন্থর ও সন্তোষজনক নয়। এ জন্য এলাকাবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সড়কটি দ্রুত সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Loading

শেয়ার করুন: