চাঁদপুর পৌরসভা পরিচালিত দুই টাকার দাতব্য চিকিৎসালয়ের সেবা বন্ধ

 

মেঘনা বার্তা ডেস্ক ॥

মাত্র ২টাকার টিকিটের বিনিময়ে অসহায় দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সেবা এবং ঔষধ দিয়ে সারাদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল, চাঁদপুর পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত দাতব্য চিকিৎস্যালয়। সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ১০৪ বছর যাবত এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি চালু রয়েছে। ৫ পয়সা থেকে শুরু করে বর্তমানে এই চিকিৎসালয়ের টিকেটের মূল্য ২টাকা। যার সেবা গ্রহণ করছেন, নদীবিধৌত পুরানবাজার এবং মেঘনার পশ্চিম তীরের চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষেরা। অথচ হঠাৎ করেই হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) এর প্রতিষেধক টিকাদান কার্যক্রমের দোহাই দিয়ে প্রায় এক মাস বন্ধ রাখা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা এবং সুপারভাইজার আষাঢ়ী নিজেদের ক্ষমতাবলে এখানকার ২জন স্বাস্থ্য সহকারীকে (চিকিৎসক) এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচিতে সরিয়ে নেন। তাদের একচেটিয়া সিদ্ধান্তের কারণে বন্ধ হয়ে যায় দাতব্য চিকিৎস্যালয়ের সেবা কার্যক্রম। যার ফলে শত শত অসহায় দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

১৮ নভেম্বর সোমবার দুপুর ১২টায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর দাতব্য চিকিৎসালয়ের প্রধান ফটক খোলা থাকলেও ভিতরে চিকিৎসকের রুমে ঝুলছে তালা। সেখানে অপেক্ষমান চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কয়েকজন অসহায় রোগী।

কথা হয় চিকিৎসালয়ের দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী বদিউল ইসলামের (বদু) সাথে। তিনি জানান, আমাদের অফিস খোলা আছে। তবে ডাক্তার স্যার জরায়ু ক্যান্সারের (এইচপিভি) টিকা কার্যক্রমে রয়েছেন। অন্যত্র দায়িত্ব পাওয়ায় তিনি এর ফাঁকেও সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রোগী দেখে যান। আবার মাঝে মাঝে দুপুরের পরে এসেও রোগী দেখেন। তবে যে সময়টা রোগী বেশি হয় তখন তিনি (টিকার কাজে ব্যস্ত থাকায়) থাকতে পারছেন না।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় বাবুল তালুকদার, আবুল কাশেম, আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা বহু বছর ধরে এখানে ২ টাকায় টিকেট কেটে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখানকার ডাক্তারও অনেক আন্তরিক এবং ভালো মানুষ। গত প্রায় একমাস ধরে এখানে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। আমাদের মত গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত হাসপাতালটি খুলে দেওয়া হোক।

স্থানীয় দুলাল খান বলেন, ১০৪ বছর ধরে এই হাসপাতালটি চালু রয়েছে। এখানে শুধু পুরানবাজারই নয়, পার্শ্ববর্তী চলাঞ্চলের মানুষরাও চিকিৎসা নিতে আসে। হঠাৎ করে প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ আছে। গরিব মানুষরা চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে। আমরা পৌরসভার মাননীয় প্রশাসকসহ সকলের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো, দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা হোক।

এ বিষয়ে পৌর দাতব্য চিকিৎসালয়ের স্বাস্থ্য সহকারী জিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, আগে এখানে ৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী ছিলাম। বর্তমানে ২জন দায়িত্ব পালন করছি। গত ২৪ আগস্ট থেকে হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) এর প্রতিষেধক টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের সেখানে দায়িত্ব দিয়েছেন। অনেক রোগী আমাদের ফোন করেছেন। তারা চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। আগামী ২৪ তারিখ এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম শেষ হবে। আশা করছি তখন থেকে আবার রোগীরা নিয়মিত সেবা পাবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রমের কারণে এই সমস্যা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে।অতি দ্রুত আগের মত দাত্তবো চিকিৎসালয়ের সেবা কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯২০ সালে বৃটিশ শাসনামলে পুরাণবাজারের সাবেক ফায়ারসার্ভিস এলাকায় নির্মাণ করা হয় এ দাতব্য চিকিৎসালয়। বর্তমানে এই ভবনটির বয়স ১০৪ বছর। বিট্রিশ সরকার, পূর্ব পাকিস্তান সরকার এবং বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার- এই তিনটি রাষ্ট্রিয় শাসনামল ধরে এখানে অসহায় রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শুরুর দিকে সেবা গ্রহীতাদের টিকেট মূল্য ছিল ৫ পয়সা। বর্তমানে চাঁদপুর পৌরসভার অর্থায়নে পরিচালিত পৌর দাতব্য চিকিৎসালয়ের টিকেট মূল্য ২টাকা।

 

Loading

শেয়ার করুন: