প্রেস বিজ্ঞপ্তি ॥
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এদেশের তরুণ সমাজ সর্বদা অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যার অতুলনীয় উদাহরণ। নির্লোভ ও স্বার্থহীনভাবে কীভাবে নিজেকে উৎসর্গ করতে হয়, তার অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তরুণ শিক্ষার্থীরা। “নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের আশা-আকাক্সক্ষার কার্যকর প্রতিফলন চাই” এই প্রতিপাদ্যের উপর আন্তর্জাতিক যুব দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরতে এবং তরুণদের দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন বিষয়ে ধারণা প্রদানের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্যে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও টিআইবি, চাঁদপুর-এর আয়োজনে ও ইয়ূথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সহযোগিতায় এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ১২ আগস্ট ২০২৪ র্যালি ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
র্যালিটি চিত্রলেখা মোড় থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালি পরবর্তী মানববন্ধন অঙ্গিকার পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানা, সনাকের ভূমি বিষয়ক এসিজি গ্রুপের সমন্বয়কারী উজ্জ্বল হোসাইন। “নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের আশা-আকাক্সক্ষার কার্যকর প্রতিফলন চাই” এই প্রতিপাদ্যের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব প্রধান নুর মোহাম্মদ, মোঃ নজরুল ইসলাম বাবু, তারুণ্যের অগ্রদূতের সভাপতি ফাহিম হোসেন। প্রতিপাদ্যের উপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ইয়েস সদস্য আব্দুর রহিম রাজু, দিবসের তাৎপর্য ও দাবীসমূহ উত্থাপন করেন ইয়েস গ্রুপের দলনেতা মোঃ নাহিম নিরব। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সভাপতি ও সদসবৃন্দ, সনাক-চাঁদপুরের এসিজি গ্রুপ ও ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ।
টিআইবি ও সনাক মনে করে, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে তারুণ্যের এই জয়রথ যেন সংকীর্ণ কোনো চোরাবালিতে আটকে না যায়, সেই লক্ষ্যে তাদের বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা সর্বোপরি তাদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। তরুণদের আশা-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন, সাম্য ও মেধাভিত্তিক, গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক, সুশাসিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণই হোক এ বছর ‘‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’’ পালনের মূলমন্ত্র। বিশ^ যখন তরুণদের ওপর নির্ভর করে একটি টেকসই উন্নত বিশে^ পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তারুণ্যের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। চলমান আন্দোলন প্রমাণ করেছে তরুণরা অদম্য, অপ্রতিরোধ্য। তারুণ্যকে উপেক্ষা বা নিপীড়নের মাধ্যমে টিকে থাকা যায় না। তরুণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলোÑ দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও সর্বোপরি সুশাসনের প্রকট ঘাটতিতে সৃষ্ট স্বৈরাচারকে চরম মূল্য দিতে হয়। একইসঙ্গে ‘‘স্বৈরাচার-পতন’’ উদ্যাপনের নামে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানে হামলা; মন্দির ও উপসনালয় ধ্বংসসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ, গণমাধ্যম, পুলিশবাহিনী ও পেশাজীবিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ আচরণের মাধ্যমে তারুণ্যের এই অর্জন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেতে পারেÑএ জাতীয় আত্মঘাতী গর্হিত অপরাধ প্রতিরোধে তরুণ সমাজ স্বপ্রণোদিত হয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। যে নতুন দিনের শুভসূচনা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার আলোকে রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে এদেশের সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চয়তাসহ একটি বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক সুশাসিত স্বদেশ বিনির্মাণে দুর্জয় তারুণ্য অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করবেÑবাংলাদেশের আপামর জনগণ সেই আস্থা ও বিশ^াসের জায়গা থেকে তাদের সারথি হয়েছে।
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ‘‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’’ পালনের প্রস্তাবটির প্রতি সমর্থন জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে ১২ আগস্ট ‘‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’’ হিসেবে উদ্যাপন করা হয়।
টিআইবি ও সনাকের উদ্যোগে বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী চলমান সামাজিক আন্দোলনÑ বিশেষ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টি কার্যক্রমের মূল শক্তি তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী। টিআইবি ও সনাক মনে করে, সুশাসিত, উন্নত ও টেকসই ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের যুব সমাজই মূল চালিকাশক্তি। টিআইবি কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণ-যুবকদের সম্পৃক্ত করে দেশের ৪৫টি সনাক অঞ্চলে ও ঢাকার ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন সচেতনতা ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও টিআইবি আন্তর্জাতিক যুব দিবস বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উদ্যাপন করছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সনাক, এসিজি ও ইয়েস সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের অংশগ্রহণে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে টিআইবি।