জসিম উদ্দিন :
ফরিদগঞ্জের ৯নং গোবিন্দপুর (উত্তর) ইউনিয়নের নয়াহাট বাজারে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির সংঘর্ষের ৪জন আহত ও পুরো ফরিদগঞ্জ উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য নেপত্ত্বের কারিগর চির্কা চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরে আলম।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারের নেতৃত্বে নয়াহাট বাজারের চির্কা চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হল রুমে কেককাটা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের মাঝে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া, উত্তপ্ত হতে থাকে প্ররিস্থিতি। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮ টায় আওয়ামীলীগ-বিএনপির দফায় দফায় সংঘর্ষে আওয়ামীলীগের ১ জন এবং বিএনপির ৩ জন আহত হয়। সংঘর্ষের গঠনায় গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজন ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে, গাব্দেরগাও, রূপসা, বদরপুর, রুস্তমপুর, গৃদকালিন্দিয়া বাজার সংঘর্ষের গঠনায় প্রায় ২০/২৫ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
৫ আগষ্টের পর ফরিদগঞ্জের রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকলেও নয়াহাটের সংঘর্ষের গঠনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ভাবে অশান্ত হওয়া ফরিদগঞ্জে নেপত্বের গঠনা উদগাঠনের জন্য অনুসন্ধানে নামে সাংবাদিকরা৷ গটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পুতুল সরকারের নেতৃত্বে আয়োজিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠান প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে চির্কা চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কক্ষে পালন করা হয়েছে, এমনি জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী ও নৈশপ্রহরী ফারুখ সরকার।
একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে কোন রাজনৈতিক দলের কোন অনুষ্ঠান আয়োজনের নিয়ম আছে কিনা? প্রধান শিক্ষক কিভাবে একটি সরকারি স্কুল কক্ষে একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানের ব্যাবহারের অনুমতি দিলেন তা জানতে চাইলে, চির্কা চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরে আলম বিদ্যালয় কক্ষ ব্যাবহারের অনুমতির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, তারা তালা ভেঙ্গে ভিতরে ডুকে অসুষ্ঠানটি করেছে। যেহেতু তার বিদ্যালয়টির তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করার পর তিনি বিষয়টি জানার পরও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কোন সদস্যকে জানানো কিংবা আইনি কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেন কি না এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে আমি ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী যেখানে আপনার বিদ্যালয়ের কক্ষের তালা ভেঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের দলীয় অনুষ্ঠানের আয়োজনের পর ৪ দিনে সমগ্র ফরিদগঞ্জের রাজনৈতিক অস্তিরতা সৃষ্টি হওয়ার পরও আপনার দায়িত্বের জায়গা থেকে কি কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেননি? এমন প্রশ্নের কোন সদউত্তর দিতে পারেন নি তিনি। বরং তিনি বলেন বিষয়টি আমি সেভাবে চিন্তা করিনি। একজন প্রধান শিক্ষকের স্কুল কক্ষ ব্যাবহার করে রাজনৈতিক দলের একটি অনুষ্ঠানেকে কেন্দ্র করে সমগ্র উপজেলার রাজনৈতিক অবস্থা অশান্ত হওয়ার পর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কোন ব্যাবস্থাগ্রহণ তো করেননি, এমনকি তার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাউকে না জানানো প্রয়োজন মনে করেননিন ওই প্রধান শিক্ষক৷
স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, পূর্বেও এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কক্ষ ও মাঠ ব্যাবহার করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দলীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে৷
বিদ্যালয় কক্ষ ব্যাবহার করে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহাবুবুর রহমান জানান, বিষয়টি এই প্রথম আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষটি খুবই দুঃখজনক, গঠনার পর এতোদিন অতিবাহিত হওয়ার পরর বিদ্যালয় কতৃপক্ষের কেউই এবিষয়ে আমাদেরকে কিছুই জানায়নি। অফিসিয়াল নিয়মানুযারী আমরা প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো।
এবিষয় জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহার ইয়াসমিন বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। প্রধান শিক্ষক কার অনুমতি নিয়ে, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য বিদ্যালয় কক্ষ ব্যাবহার করতে দিয়েছেন ?। আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসাকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিবো। অপরাধ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।