জসিম উদ্দিন :
স্বামী হুমায়ুন খান (৬০) ঢাকার একটি বাড়িতে নিরাপত্তা কর্মী কাজ করেন, নুন আনতে পান্তা পুরায় অবস্থা এমন স্বল্প আয়ের পরিবারটি। ৪ সন্তানের জননী ৫০ বছর বয়সী শাহিনুর বেগম দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিস্তিতে টাকা তুলে গড়ে তুলেন একটি টিনসেট ঘর ৷ গ্যাসের চুলার আগুনে সকল কিছু পুড়ে গিয়ে মুহুর্তের ব্যাবধানে সকল স্বপ্ন ছাই হয়ে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছে একটি পরিবার।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) উপজেলার ১৪ নং দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের পূর্ব পোঁয়া মানিক খান বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, শাহিনুর বেগমের তিন ছেলের বড় দুজন ঢাকায় একটি কারখানায় স্বল্প বেতনে চাকুরী করেন। বড় মেয়ে সাহিদার (২২)বিয়ের পর থেকে স্বামী বাড়িতেই থাকেন। স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় কালির বাজার মিজানুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া মিরাজ হোসেন (১৩) কে নিয়ে এই ঘরটিতে থাকতেন মা শাহিনুর বেগম। ছেলে স্কুলে তাই শাহিনুর বেগম ঘরে তালা দিয়ে পাশ্ববর্তী বাড়িতে গিয়েছিলেন। বেলা এগারোটায় ঘরটিতে আগুন ধরেছে এমনটি দেখতে পায় বাড়ির কয়েকজন যুবক, কল দেয়া হয় স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস অফিসে এবং বাড়ির কয়েকজন মিলে পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে পানি এনে আগুনের নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করে, বেলা সাড়ে ১১ টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু ততক্ষণে ঘরে থাকা সকল কিছু পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে। এসময় পার্শ্ববর্তী একটি পাক ঘরে আগুনের লেলিহা কিছুটা ছড়িয়ে পড়তে দেখলে ওই বাড়ির লোকজন পাক ঘরে থাকা সকল সরঞ্জাম দ্রুত বাহিরে নিয়ে আসে। এতে রাজমিস্ত্রী ফারুক খান (৫০) এর পাশ্ববর্তী পাক ঘরটির তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও শাহিনুর বেগমের ঘরে থাকা কোন কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
আগুনে পুড়ে সর্বশান্ত হওয়া শাহিনুর বেগম এই প্রতিবেদককে জানায়, তার ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজসহ, মেয়ের চেইন ও দুটি আংটি, এক জোড়া কানের দুল এবং নগদ টাকা সবই পুড়ে গেছে। সহায় সম্বল সব আগুনে পুড়ে যাওয়ায় এখন খোলা আকাশের নিচে ছেলেকে নিয়ে দিন কাটাতে হবে। খবর পেয়ে স্কুল থেকে ছুটে আসা শাহিনুর বেগমের ছোট ছেলে মিরাজ হোসেন বাড়িতে এসে দেখেন তার ঘরে থাকা সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, ঘরে থাকা একটি স্মার্ট ফোন এবং নিজের পরিধানের জামাকাপড় সহ পুড়ে গেছে তার পড়ার বইগুলোও।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একই বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঘরে গ্যাসের চুলা ছিলো, সম্ভবত বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে ঘরটিতে আগুন ধরেছে। তালাবদ্ধ ঘরটিতে গ্যাসের সিলিন্ডারের বিস্ফোরণের কারণে পুরো ঘরে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে, যে কারণে ঘরে থাকা কোন কিছুই বাহির করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ কামরুল হাসান জানান, আজ বেলা ১১ টা ৩০ মিনিটে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪ নং দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের পূর্ব পোঁয়া মানিক খান বাড়িতে একটি অগ্নিকাণ্ডের খবর পাই, তাৎক্ষণিক আমাদের একটি টিম রওনা দিয়ে ১১ টা ৪৫ মিনিটে গঠনাস্থলে পৌঁছায়। পাম্প বসিয়ে পানি ছিটানোর মাধ্যমে বেলা ১ টায় পুরোপুরি ভাবে আগুন নিভাতে সক্ষম হই৷ অনুমান করা হচ্ছে গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণের কারনে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান বেশি হয়েছে।