বাংলাদেশ ক্রিকেটে ভোগান্তির অপর নাম ওপেনিং জুটি

নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর দলের হাল-বেহাল নিয়ে যে বিশ্নেষণ হচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বোলারদের চেয়ে দায় কম নয় ওপেনারদেরও। তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকারের প্রথম জুটি ভালো শুরু এনে দিলে বাংলাদেশ এখন সেমিফাইনাল বা তার কাছাকাছি থাকতে পারত, শেষ ম্যাচটি নিয়মরক্ষার ম্যাচ হয়ে উঠত না।

৭ ম্যাচের ৬টিতেই ওপেনিং করেছেন তামিম-সৌম্য, আফগানিস্তান ম্যাচে সৌম্যের জায়গায় ছিলেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু ফল শেষ পর্যন্ত একই। সাত ম্যাচের একটিতেও উদ্বোধনী জুটি প্রথম দশ ওভার টিকে থাকতে পারেনি, কোনো একজন কোনো একটি ম্যাচেও ইনিংসের অর্ধেক ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে পারেননি; ম্যাচ জেতানো ইনিংস দূরের কথা, দলের পক্ষে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ইনিংসগুলোর প্রথম দশটির মধ্যেই তাদের কোনো ইনিংস নেই। যে ছয় ম্যাচে তামিম-সৌম্য ওপেনিং করেছেন, তার চারটিতেই আগে আউট হয়েছে সৌম্য। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ম্যাচে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে, উইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচে নবম ওভারে।

ছয়টিতে ওপেনিং করে সর্বোচ্চ ১৫.১ ওভার পর্যন্ত টিকেছেন সৌম্য; এ ছাড়া আফগানিস্তান ম্যাচে ৫ নম্বরে নেমে খেলতে পেরেছেন ১০ বল। সবমিলিয়ে ৭ ম্যাচে ব্যাটিং করে মোট রান তার ১৪৪, গড় ২০.৫৭। বাঁহাতি এ ওপেনারের কেবল একটি জায়গায় মুখরক্ষার সুযোগ আছে, বল তিনি নষ্ট করেননি। ১৪৪ রান করতে গিয়ে আউটের ৭ বলসহ খরচ করেছেন ১৪২ বল, স্ট্রাইক রেট ১০১.৪০। তবে বলপ্রতি রান তোলার এ জায়গাটিতেই ভয়াবহ অবস্থা তামিমের।

বেশ কিছু দিন ধরে দলে তার ভূমিকা বদলে গেছে, শুরুর দিকে একপাশ ধরে রাখা তার মূল কাজ- এমনটাই বলা হয়ে থাকে অধিনায়ক ও টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে। যে কারণে তার ৭৩.৯৪ স্ট্রাইক রেট (সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের প্রথম ২৫ জনের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন) এখন আর বিস্ময় জাগায় না।

কিন্তু একপাশ আগলে রাখার যে প্রধান দায়িত্ব তাঁর কাঁধে, সেটিতেও পাসমার্ক পেতে গলদঘর্ম অবস্থা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আউট হয়েছেন নবম ওভারে, ভারতের বিপক্ষে দশমে। ইনিংসে সর্বোচ্চ টিকে থেকেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ২৪.১ ওভার পর্যন্ত। কমপক্ষে আট ওভার পর্যন্ত টিকে থাকলেও সাত ইনিংসের একটিকেও বড় পরিণতি দিতে পারেননি দেশসেরা এ ওপেনার।

সর্বোচ্চ তার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা ৭৪ বলে ৬২ রানের ইনিংসটি; এ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের আগে করেন ৫৩ বলে ৪৮ রান। এর বাইরে অন্য ম্যাচগুলোতে তার পারফরম্যান্স যথাক্রমে ২৯ বলে ১৬ (দক্ষিণ আফ্রিকা), ৩৮ বলে ২৪ (নিউজিল্যান্ড), ২৯ বলে ১৯ (ইংল্যান্ড), ৫৩ বলে ৩৬ (আফগানিস্তান) এবং ৩১ বলে ২২ রান (ভারত)।

সবমিলিয়ে ৩০৭ বলে ২২৭ রান, গতকাল পর্যন্ত রান সংগ্রাহকদের মধ্যে যা ২৫তম। মজার বিষয় হচ্ছে, ২২৭ রান করতে গিয়ে একটি ছয়ও নেই তামিমের ইনিংসে, সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক প্রথম ২৯ জনের মধ্যে এমন ব্যাটসম্যান একমাত্র তিনিই। আরেকটি দিক হচ্ছে মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহ এবং তৃতীয় ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারকে যে তিনটি চার হাঁকিয়েছেন, সেটি হচ্ছে গত দুই বছরে ইনিংসের প্রথম তিন ওভারের মধ্যে তার প্রথম তিন বাউন্ডারি!

তবে ব্যক্তিগতভাবে বড় কিছু না হোক, জুটি হিসেবে তামিম-সৌম্য যদি আরও বেশি সময় টিকে থাকতেন এবং আরও বেশি রান জোগাড় করে দিতে পারতেন, সেটির সরাসরি প্রভাব পড়তে পারত বাকি ব্যাটিং লাইনআপে।

সাত ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটি ওপেনিং জুটিতে পঞ্চাশ পেরিয়েছেন তারা- দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬০ আর উইন্ডিজের বিপক্ষে ৫২। বলাবাহুল্য, এখন পর্যন্ত পাওয়া তিন জয়ের দুটিই ওই দুই ম্যাচের। এ ছাড়া গোটা বিশ্বকাপে ওপেনাররা যে কীভাবে দলের জয়ের ভিত্তি গড়ে দেওয়ার প্রভাবক হচ্ছেন, সেটি ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, রোহিত শর্মা, জনি বেয়ারস্টো, জেসন রয়দের মাধ্যমে এরই মধ্যে প্রমাণিত।

এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের সেরা চারে না ওঠার ব্যর্থতায় রয়েছে ওপেনারদের ব্যর্থতাও।

Loading

শেয়ার করুন: