হাজীগঞ্জে বায়োফ্লকে তেলাপিয়া চাষ : প্রথম চালানেই সফল ফাহাদ

আনোয়ারুল হক ॥

ফাহাদ হোসেন (২৮) ইংরেজী বিষয় নিয়ে অনার্স পাস করে ঢাকায় একটি বেসকারি কম্পানিতে চাকুরী করতেন। ইউটিউব দেখে তার মনে ইচ্ছা জাগে কারো অধীনে চাকুরী করবেন না। নিজেই নিজেকে গড়ে তুলবেন একজন সফল উদ্যেক্তা। তাই সেই চাকুরী ছেড়ে তিনি ইউটিউব দেখে উদ্যোগ নেন বায়োফ্লক পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছ চাষেয়। এজন্য সিরাজগঞ্জ জেলার তার এক বন্ধুর বায়োফ্লক পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছ চাষেয় খামারে ১০ দিন ব্যাপি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রথম চালানেই সফল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর গ্রামের মীর বাড়ীর প্রবাসী মো:মুজফফার হোসেনের ছেলে। সে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল হচ্ছেন।

জানা গেছে,তার বাড়ির সামনের আঙিনায় প্রথমে ৫ শতাংশ জায়গায় গর্ত করে সাড়ে ৪ ফুট করে এর চারপাশে পুকুরের মতো পাড় তৈরী করেন। বৃত্তাকারে চারপাশ ও উপরে জালের বেড়া দিয়ে ভেতরে ত্রিপল বিছিয়ে দুই লক্ষ লিটারের পানি ভর্তি করে গত বছরের আগস্ট মাসে তেলাপিয়া মাছের ২১ হাজার রেণু পোনা দিয়ে প্রাথমিক এই কার্যক্রম শুরু করেন।

এই উদ্যোক্তা ও মৎস্য কর্মকর্তা জানান, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিলে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়।

উদ্যোক্তা ফাহাদ হোসেন জানান, ইউটিউবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ চাষের পদ্ধিত ভিডিও দেখে আমার ভাল লেগেছে। তবে এই পদ্ধিতে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়ার কথা বার্তা শুনা যায় নি। বেশির ভাগ মানুষের মুখেই শুনেছি এটি একটি লস প্রকল্প। পরবর্তীতে আরও ভাল করে খোজ-খবর নিয়েছি। জানতে পারলাম প্রথমে ইজরাইলে এপদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু হয়। তাই চিন্তা-ভাবনা করে দেখলাম বিষয়টি নিয়ে কীভাবে আগানো যায়। পরে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে তেলাপিয়ার ক্রয় করেন। গত বছরের আগস্ট মাসে মাছ চাষ শুরু করেন। তিনটা থেকে চারটা মাছ এক কেজি ওজনের হয়। মাছের সাইজে আসতে সাড়ে তিন মাস লেগেছে। এ পদ্ধতিতে যদি যথা সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায় তাহলে এটি চাষ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো মানের মাছের পোনা দিয়ে চাষ করা হলে লসের পরিমান খুবই কম।

তিনি আরও বলেন, খামারটি তৈরি করতে সবকিছু মিলে ছয় থেকে সাত লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম বার মাছের রেনু পোনা, খাবার, বিদ্যুৎ বিল,তেল ,এসব বাবদ তিন লক্ষ দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।এতে মাছ উৎপাদন হয়েছে চার থেকে সাড়ে চার টন। গত জানুয়ারি মাসে মাছ বিক্রি করেছি। এতে চার লক্ষ আশি হাজার টাকা বিক্রি করি। প্রথম চালানের খরচ বাদ দিয়ে মাছ বিক্রয় করে ১লক্ষ ৭০ হাজার লাভ হয়েছে। শীতের কারণে আমার আশানুরূপ মাছ উৎপাদন হয়নি। আমার টার্গেট ছিল সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় টন মাছ উৎপাদন করা। আশা করি এটার পাশাপাশি অরেকটা ট্যাংকটি তৈরি করব। তখন লাভের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।

উদ্যোক্তা ফাহাদের ছোট ভাই রিদয় মোল্লা ভাইয়ের সাথে খামারটি পরিচালনা করেন জানিয়ে বলেন, মাছের কোন ধরনের সমস্যা হয় সেদিকে খেয়াল রাখি। এধরনে মাছের খামারের পানিতে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন থাকতে হয়। বিদ্যুৎ লোড শেডিংয়ের কারণে এক ঘন্টার বেশি অক্সিজেন মেশিন বন্ধ রাখা যায় না। অক্সিজেনের অভাব হলে মাছের ফুলকার ভেতর জন্য সমস্যা হয়। এছাড়া মাছের তেমন রোগ হয় না। মাছগুলো যখন ছোট থাকে তিন বেলা খাবার দিয়ে হয়। আর বড় হয়ে গেলে দুই বেলা খাবার দিয়ে হয়। মাছগুলো আকারে বড় হতে তিন মাসের অধিক সময় লাগে।

স্থানীয় যুবক খলিল গাজী জানান, এটি একটি নতুন প্রযুক্তি। এই খামারে মাঝে মধ্যে দেখতে আসি। তারা কীভাবে খামার পরিচালনা করেন। আমাদের মতো যুবকদের সময় দেয়া উচিত। এই পদ্ধিতে মাছ চাষ করলে কম খরচে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়। এর পেছনে বেশি সময় দিতে হয় না। দিন-রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র ১ থেকে ২ ঘন্টা পরিচর্যা করতে হয়। আমার চিন্তা ভাবনা আছে এই রকম একটি খামার তৈরী করার জন্য।

আরেক যুবক আসিফ গাজী জানান,আমাদের বাড়ীর পাশে খামারটি। উদ্যোক্তা ফাহাদ ভাই অনেক কষ্ট করেন। অনেক শ্রম করেন। কয়েকদিন আছে তিনি এই খামার থেকে মাছ বিক্রয় করে ছিলেন। তিনি কিভাবে এই খামার পরিচালনা করেন। তার কাছে থেকে শিখি। তার খামার দেখে আমার নিজের মনের ভেতর আকাঙ্খা জেগেছে। এই রকম একটা খামার তৈরি করতে পারতাম। তাই আমি আশাবাদী যদি কখনো সুযোগ পাই। তাহলে খামার তৈরি করব।

হাজীগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান,এটি একটি নতুন পদ্ধতি। উদ্যোক্তা ফাহাদ হোসেন মাছ চাষের বিষয়টি আমার জানা নেই। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মনোসেক্স তেলাপিয়া শিং,কৈই,টেংরা চাষ করলে বেশি লাভ হতে পাবে। যদি কেউ শুরুতে শেখার জন্য মনোসেক্স তেলাপিয়া, শিং,কৈই,টেংরা মাছ চাষ করে তাহলে তিনি লাভবান হতে পারবে।

তিনি আরও বলেন,বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে বিদ্যুৎ, ক্যামিকেল ব্যবহার, এয়াররেশন লাগে, ট্যাংকির পানি পার‌্যামিটার ঠিক আছে কিনা এগুলো মনিটরিং করা প্রয়োজন হয়। অনেকের বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের সঠিক নিয়ম না জানা থাকার কারণে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা চেড়ে দিয়েছে। যাদের পুকুরে মাছ চাষ করার সুযোগ নেই। তারা বাসা বাড়ীর ছাদে, উঠানে ট্যাংকির মাধ্যমে তেলাপিয়াসহ অন্য মাছ চাষ করতে পারে। মাছ উৎপাদনের ভাল একটা প্রযুক্তি।

Loading

শেয়ার করুন: