আমরা দক্ষ যোগ্য মানবিক সৃজনশীল শিক্ষার্থী তৈরি করব: শিক্ষামন্ত্রী

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি বলেছেন, শিক্ষার সুফল যদি আমাদের পরিপূর্ণভাবে ভোগ করতে হয়, তাহলে আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সামনে যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, সেখানে প্রযুক্তি শুধু জানলেই চলবে না, প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও আমাদের দক্ষ হতে হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, এ সময়ের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, প্রযুক্তির চর্চা আমাদের শৈশব থেকেই চালু করতে হবে। আর সেজন্য আমরা নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছি। এখন আমরা আরও একটি নতুন প্রোগ্রাম শুরু করতে যাচ্ছি। যেখানে সুপার কিড নামে ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিক্ষার্থীরা কোডিং, ডিজাইনিং ও রোবটিক্স- সব শিখবে।

শনিবার (৩ জুন) দুপুরে চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০২৩ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে আমি চাঁদপুরে একটি পাইলটিং প্রোগ্রাম করেছি, যেখানে আল-আমিন একাডেমি, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও পুরাণ বাজার ডিগ্রি কলেজের ১০ জন করে ৩০ জনকে নিয়ে ৬ সপ্তাহের একটি প্রশিক্ষণ করেছিলাম। সেখানে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তারা শুধু উপজেলা কিংবা জেলায় নয়, তারা বিভাগীয় পর্যায়ে রোবটিক্সে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। এই অর্জনে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই প্রতিষ্ঠানের ১৭০০ শিক্ষার্থী রোবটিক্সের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। আমরা আশা করছি, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ উদ্দীপনা ধরে রাখতে পারব।

দীপু মনি বলেন, এখন নানা জায়গায় দেখা যাচ্ছে সাহসিকতার জন্য হোক, অন্য কারণে হোক, কিশোর গ্যাংয়ের একটি প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। আমি আশা করছি, এই প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী এই ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করবে না। কোনো সমস্যা হলে শিক্ষক, অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করবে, কোনোভাবেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের জড়িত করা যাবে না। জীবনে একবার পা পিছলে গেলে তারপর আবার উঠে দাঁড়ানো খুবই কঠিন। অনেক সময় আর হয়ে ওঠে না। আমি আশা করি, এই কথাগুলো তোমরা সবাই মনে রাখবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের এক জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। পরিমাণে গত বছরের তুলনায় এ বছরও অনেক বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে একই সময়ে জিডিপির আকার তুলনামূলক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সে হিসেবে হয়তো শিক্ষায় বরাদ্দ কিছুটা কমেছে। আমি বার বার বলছি, আমাদের যে মেগা প্রজেক্টগুলো চলছে এগুলো শেষ হয়ে গেলে আমি আশা করি শিক্ষাই হবে আমাদের মেগা প্রজেক্ট। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো সেই বরাদ্দগুলো সঠিকভাবে যেন কাজে লাগাতে পারি। আমরা দক্ষ, যোগ্য , মানবিক, সৃজনশীল শিক্ষার্থী তৈরি করব। তাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। তারা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।

তিনি বলেন, আমাদের আরও যেটি খুব দরকার সেটি হলো গবেষণা। গবেষণার জন্য এবারও খুব বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি বিগত দিনে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার জন্য তাদের বরাদ্দ কাজে লাগাতে পারেনি, তারা এ বছর কাজে লাগাবে। আমরা গবেষণা ও উদ্ভাবনে এগিয়ে যাব। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উপকরণের ক্ষেত্রে কলমের দাম বৃদ্ধি করার প্রস্তাব আছে। এটি নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেই আলোচনায় আমাদের প্রস্তাব থাকবে কলমের দাম যেন বাড়ানো না হয়। কারণ কলম সকল শিক্ষার্থী ব্যবহার করে।

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ। কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক জয়নাল আবেদীন ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক সেতারা খাতুনের যৌথ সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে আল-আমিন একাডেমির ৪টি ক্যাম্পাসের ২২টি ইভেন্টে মোট ৬৬টি পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়াও অলিম্পিয়াডে ১৭টি এবং মেধা পুরস্কার দেওয়া হয় ১০টি। সবশেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউসুফ গাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা মাসুদা নুর, চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী মাঝি, ফরিদা ইলিয়াছ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. জহির উদ্দিন মিজিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

Loading

শেয়ার করুন: