চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত হলো এস্ট্রনট ক্যাম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

মহাকাশ পাড়ি দেওয়ার কথা মনে এলেই চোখের সামনে চাঁদ ভেসে ওঠে। পৃথিবীর মানুষ প্রথমে চাঁদের রহস্য মোচনেই উদগ্রীব হয়েছিল। তাই তো নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্সের নাম মানুষ কখনো ভুলবে না। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ১৯৬৯ সালে প্রথম চাঁদে মহাকাশযান পাঠায় তার নাম অ্যাপোলো-১১। অর্ধশতক আগে চাঁদে পা রাখার সময় মার্কিন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, ‘মানুষের জন্য একটি ছোট্ট পদক্ষেপ কিন্তু মানবজাতির বিশাল এক অর্জন’।

অ্যাপোলো-১১ মিশন নিয়ে পুরো দৃশ্যটি রচিত হলো চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত এস্ট্রনট ক্যাম্পে। শিশু-কিশোরদের মহাকাশ বিজ্ঞানে উৎসাহিত করতে এবং মহাকাশের বিভিন্ন বিষয়ে জানানোর উদ্দেশ্যে ৪ থেকে ১৪ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম এবং স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্পের উদ্যোগে চাঁদপুর সরকারি কলেজে শনিবার (৯ মার্চ) অনুষ্ঠিত হলো এস্ট্রনট ক্যাম্প।

চাঁদপুর ও আশপাশের বিভিন্ন স্কুল থেকে প্রায় ২০০ জন ছাত্রছাত্রী অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে দিনব্যাপী আয়োজনে অংশগ্রহণ করে।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল অ্যাপোলো-১১ মিশন নিয়ে স্পেস টক এবং ৫টি দলে বিভক্ত হয়ে রোবটিক্স ওয়ার্কশপ, রকেট লঞ্চিং ওয়ার্কশপ ও ভিআর বেইস এস্ট্রনট ট্রেইনিং। ভিআর ট্রেইনিংয়ের মাধ্যমে বাচ্চাো ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। স্পেস রোবটিক্স ওয়ার্কশপে রোবট তৈরির নানা দিক হাতে-কলমে দেখানো হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা রোবট তৈরির নানা যন্ত্রাংশ নিয়ে নিজেদের মতো রোবট তৈরির প্রচেষ্টা চালায়।

রকেট ক্যাম্পেও অনুরূপ দৃশ্য দেখা যায়। এতে রকেট তৈরির বিভিন্ন পর্যায় ও প্রযুক্তিক বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের সরলভাবে বোঝানো হয় এবং নানা যন্ত্রাংশ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মডেল রকেট তৈরির নানা পর্যায়ের কাজ করার জন্য শিক্ষার্থীরা কয়েকটি উপদলে ভাগ হয়ে যায়। তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় তৈরি হয় মডেল রকেটটি। পরে কলেজের মাঠে শিক্ষার্থীরা সমবেত হয় এ রকেট উড্ডয়নে। নিজেদের হাতে তৈরি রকেট সত্যিই উড়তে পারছে কি না, তা নিয়েই চাপা উত্তেজনা দেখা যায় তাদের মাঝে। সময় গড়াতেই মডেল রকেট উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা শুরু হয়। রকেট ওড়া শুরু করতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে উপস্থিত সবাই।

এর বাইরেও বিশেষ চমক হিসেবে ছিল এস্ট্রনট ফটো বুথ, যেখানে শিশু-কিশোররা এস্ট্রনট ড্রেস পরে ছবি তুলে।
আয়োজনে মিশন এক্সপার্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফজলে রাব্বী ভুইয়া, আকরামুল হাসান চৌধুরী, আবু সাইদ, নুরে সাঈম সাকিব, মো. মিসবাহ উদ্দিন, ইকরাম ভুইয়া।

আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ।

তিনি বলেন, চাঁদপুরে এ ধরনের অ্যাক্টিভিটি হচ্ছে এতে আমি খুব আনন্দিত। আমি মনে করি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশে ও পরবর্তী প্রজন্মকে মহাকাশ বিজ্ঞানে উৎসাহিত করার জন্য এ ধরনের ক্যাম্প আরও বেশি বেশি দরকার।

বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের উপদেষ্টা আরিফুল হাসান অপু বলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে ১০ লাখ ছাত্রছাত্রীকে মহাকাশ বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম। তারই অংশ হিসেবে চাঁদপুরে আমাদের এই ক্যাম্প। স্পেস সায়েন্স ও স্পেস এক্সপ্লোরেশন নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অনেক জানার আগ্রহ রয়েছে। আমরা চাই স্পেস গবেষণায় ছোট ছোট অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে বিজ্ঞানের যে আনন্দ তা ধরে রাখা এবং তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আরও আগ্রহী করা তোলা।

আয়োজনে ভেন্যু পার্টনার হিসেবে ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ এবং সাপোর্ট পার্টনার হিসেবে ছিলেন রোবাস্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।

 

Loading

শেয়ার করুন: