চাঁদপুরে দুই উপজেলা ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
চাঁদপুরের ৮ উপজেলার মধ্যে শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার পরে এবার ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হয়েছে কচুয়া ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা।
মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজনও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই দুই উপজেলা গৃহহীন মুক্ত হয়। বুুধাবর (৯ আগষ্ট) সকালে গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে সারাদেশে এসব গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভূমিসহ গৃহপ্রদান কার্যক্রম উদ্বোধনের সাথে সাথে দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলার ১৫৮ পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষে দলিল হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৭০ পরিবার, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৩৫ পরিবার, কচুয়া উপজেলায় ৩৮ পরিবার ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ১৫ পরিবারের নিকট দলিল হস্তান্তর করা হয়।
সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভাপতির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান ও প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ প্রমূখ।
এ সময় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা এবং উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন নয়, তারপরও জন্মদিন হিসেবে কেক কেটে আনন্দ উল্লাস করত। যেদিন আমাদের চোখের পানি পড়ে, মিথ্যা জন্মদিন বানিয়ে সেদিন সে উৎসব করত। শুধুমাত্র আমাদের আঘাত দেওয়ার জন্য এটা করত। ১৫ আগস্ট আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানা বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশের আরেক মীরজাফর খুনি মোস্তাককে দিয়েই জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি এরশাদও জিয়ার পথ ধরে ক্ষমতা দখল করেছিল।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের উদ্দেশে কথা বলেন। সরকারপ্রধান বলেন, যারা ঘর পেয়েছেন তারা ঘরের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। ঘরগুলোকে যত্ন করতে হবে। এখন ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে, কোথাও যেন পানি জমে না থাকে। মশার প্রজনন কেন্দ্র যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। বিদ্যুৎ ব্যবহারে আপনারা সাশ্রয়ী হবেন। জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। দেশের একটি মানুষও অবহেলিত থাকবে না, সেটাই তার আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমরা তার সেই আকাঙ্ক্ষাই পূরণ করছি।
আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের জন্য কাজ করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটা বিরোধী দল আছে- মানুষ খুন করা, অগ্নিসন্ত্রাস করা, বাসে আগুন দেওয়া, রেলে আগুন দেওয়া, পুলিশকে মারা, মানুষকে হত্যা করা- এ ধরনের কাজই তারা করে যায়। ‘৭৫-এ জাতির পিতা হত্যা করার পর বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রতি রাতে কারফিউ থাকত, মানুষের কথা বলার অধিকার ছিল না। কোনোকিছু বললেই ধরে নিয়ে গুম করা হতো। লাশও গুম করত। সেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দল নিয়ে আমরা দিনের পর দিন আন্দোলন করেছি। মানুষ আজ ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করেছে।
দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক অধিকারকে বিশ্বাস করে। মানুষের ভোটের অধিকার মানুষের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত দেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা রয়েছে। শত বাধা অতিক্রম করে, একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ, সবগুলো মোকাবিলা করে জনগণের আর্থসমাজিক উন্নয়নের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। দারিদ্র্যের হার অর্ধেকের বেশি নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ এই দেশে আর হতদরিদ্র থাকবে না। আমি শুধু এইটুকু বলব, একটানা সরকারে আছি বলেই আজকে ভূমিহীন মানুষের ঘর করে দেওয়া থেকে শুরু করে, শিক্ষা দীক্ষা, শতভাগ বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, স্কুল-কলেজের উন্নয়ন করে দিচ্ছি।
নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে আজকে ভূমিহীন মানুষেরা ঘর পেলেন, জমি পেলেন। শিল্প-কলকারখানা করার জন্য আমরা ১০০টি অঞ্চল করে দিয়েছি, সেখানে মানুষ বিনিয়োগ করবে, অনেক মানুষের চাকরির ব্যবস্থা হবে।

Loading

শেয়ার করুন: