চাঁদপুরে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥

ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় দীর্ঘ দুই মাস পর সোমবার (১ মে) থেকে ইলিশ ধরা শুরু করেছে চাঁদপুরের জেলেরা। প্রথম দিন ইলিশের সরবরাহ কম থাকলেও মঙ্গলবার (২ মে) সকাল থেকে চাঁদপুা মাছঘাট পুরোদমে শুরু হয়েছে ইলিশ বেচাকেনা।

এর আগে গত রোববার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাতে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। আর তাতেই টানা দুই মাস পর ইলিশের বাজারে শুরু হয়েছে বেচাকেনার হাঁকডাক।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে ঘাটে ইলিশ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। প্রতিটি আড়তের সামনে কম-বেশি ইলিশের স্তূপ লক্ষ্য করা গেছে। কেউ বরফ ভেঙে প্যাকেটজাত করছেন, আবার কেউ ইলিশ সরবরাহের কাজ করছেন। আজ ৫০০ থেকে ৬০০ মণ ইলিশ সরবরাহ হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এসব মাছের মধ্যে বেশিরভাগ মাছই ভোলা, বরিশাল ও সন্দীপ থেকে এসেছে বলে দাবি করেন তারা।

তবে মাছের দামে চড়া বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। এতে মাছ কিনতে হিমছিম খাচ্ছেন তারা। তবে অনেকে বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের উপর হিসেব করে বলছেন মাছের দাম নাগালের মধ্যেই রয়েছে।

ক্রেতারা জানান,অভিযানের পর ঘাটে মোটামুটি মাছ দেখা গেছে। চাহিদার তুলনায় মাছ ধরা পড়ছে না। কিন্তু মাছের দাম স্বাবাভিক না। এখন মাছের দাম একটু বেশি। যখন মাছ ধরা পড়বে তখন মাছের দাম কমবে।

আবু তাহের নামে এক ক্রেতা বলেন, জাটকা ইলিশ শিকারে টানা দুই মাস সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর আজ চাঁদপুর মাছঘাটে মাছ বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিনে মাছের দাম বেশি থাকায় কিনতে পারলাম না।

হাজীগঞ্জ থেকে আসা রাবেয়া আক্তার নামে এক ক্রেতা জানান, অভিযানের পর অনেক ইলিশ এসেছে বাজারে। দেশের বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্য অনুযায়ী মাছের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইলিশ ব্যবসায়ী নূর নবী জানান, গতকালের তুলনায় আজ মাছ বেশি আমদানি হয়েছে। গতকালের তুলনায় আজ ক্রেতাও বেড়েছে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর মাছও কিছুটা এসেছে।

আরেক মাছ বিক্রেতা জাহিদ হাসান বলেন, গতকাল চাঁদপুরের স্থানীয় মাছ একটু কম ছিল। আজকে কিছুটা বেড়েছে। তবে আজকে নোয়াখালী , সন্দীপ ও হাতিয়ার মাছ একটু বেশি এসেছে।

আড়তদার ইকবাল হোসেন জানান, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। গতকাল ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। কাল চাঁদপুরের কিছু লোকাল মাছ ছিল। দামও বেশি ছিল। আজকেও চাঁদপুরের স্থানীয় মাছ এসেছে। তবে দাম কমে নাই। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের কিছু মাছ এসেছে।

আরেক আড়তদার আনোয়ার হোসেন গাজী বলেন, গতকালের তুলনায় আজকে ইলিশের আমদানি ভাল হয়েছে। মাছের দাম একটু বাড়তি আছে। বর্তমানে সবকিছুর দাম বাড়তি, জেলে খরচ বেড়েছে। যার কারণে মাছের দাম বাড়তি।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার বলেন, গতকাল চাঁদপুরসহ সারাদেশে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। কাল চাঁদপুর ঘাটে মাত্র ১শ’ থেকে দেড়শ’ কেজি ইলিশ মাছ এসেছিল। আজ প্রায় ৫-৬শ মণ মাছ আমদানি হয়েছে। বেশিরভাগ মাছই ছোট। আজ বাজারে ৩০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ২০-২১ হাজার টাকা, ৫০০ গ্রামের উপর থেকে ৮-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৩০-৩৫ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ প্রায় ৫০ হাজার টাকা পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এক কেজি ওজনের ইলিশ কম এসেছে।

তিনি আরও বলেন, এখন মাছের নতুন সিজন। মাছ বড় হবে আরও দুই মাস পর। তখন মাছের আমদামি বাড়বে। মূলত ইলিশের সিজন হচ্ছে জুন, জালাই ও আগষ্ট মাসে। এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ে। সরকার যেই অভিযান দিয়েছে তা মোটামুটি সফল হয়েছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তানজীমুল ইসলাম বলেন, জাটকা রক্ষায় সরকার দুই মাসের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। এর ফলে জাটকা মাছগুলো সাগরে ফিরে গেছে। জাটকাগুলো বড় হয়ে পরিপক্ক অবস্থায় নদীতে আসবে।

তিনি আরও বলেন, সামনে পূর্ণিমার সময় নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। জুন-জুলাই মাসে যখন বৃষ্টি শুরু হয়, সেই সময় সাগর থেকে নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসে।

Loading

শেয়ার করুন: