নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছেন বলে দাবী চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওচমান গণি পাটওয়ারী। তবে সেই কাজ প্রকাশ্যে না আসলেও শেষ মুহুর্তে সংবাদ সম্মেলন করে সকলের নিকট তিনি নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন। তিনি চাঁদপুর জেলার সকল ভোটারদের নিকট নৌকা প্রতীক বিজয়ী করার আহবান জানান।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তিনি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সরকারের উন্নয়নের উল্লেখ্যযোগ্য কার্যক্রম তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে এই দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশকে উন্নত করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তাকে হত্যার মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ ব্যাহত হয়। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে এসে পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ৫ বছর এবং এরপর টানা ১৫বছর দেশ দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন।
ওচমান গণি বলেন, ১০০ বছরেও যা হয়নি চাঁদপুর-৩ আসনে ডাঃ দীপু মনির নেতৃত্বে গত ১৫ বছর তার চাইতে অনেক বেশী উন্নয়ন হয়েছে। এই আসনটিসহ ৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে তরুন প্রজন্মকে নৌকায় ভোট দিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি চাঁদপুরবাসীর উদেশ্যে বলেন, আপনারা জানেন আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা, শান্তি-শৃঙ্খলা, কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখতে এবং গণতন্ত্রের বিকাশে চাঁদপুর জেলাবাসীর প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান- আপনারা নির্বাচনের দিন স্ব স্ব ভোট কেন্দ্রে স্বপরিবারে, স্ববান্ধবে উপস্থিত হয়ে আপনাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ নিশ্চিতকল্পে নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জনগণ হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভোট প্রদান এবং নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করা।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে অনুন্নত দেশ থেকে আজ ‘উন্নয়নশীল বাংলাদেশ’ আন্তর্জাতিক বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ‘মানবতার মা’ খ্যাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য, সুদক্ষ নেতৃত্বে আমরা এখন উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত। মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো এই সংগ্রামেও আমাদের জয়লাভের বিকল্প নেই। আর সে জন্য আবারো প্রয়োজন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের শাসনামলে চাঁদপুর জেলাসহ সারাদেশে যে অভূতপূর্ব, অতুলনীয়, ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে তা এই জনপদের মানুষ আগে কখনো দেখেনি, চিন্তাও করেনি। চাঁদপুর-হাইমচরের নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও মেরিন একাডেমি স্থাপন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো, মতলব সেতু নির্মাণ, বিপুল সংখ্যক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার বহুতল ভবন নির্মাণ, রেডর্ক পরিমাণে রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারসহ যাতায়াত, যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি-এর যোগ্য নেতৃত্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় গত ১৫ বছরে চাঁদপুর জেলা সদর ও হাইমচরে যত উন্নয়ন হয়েছে এর পূর্বের কয়েক শত বছরেও এমন উন্নয়ন হয়নি।
এছাড়া চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন হয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রক্রিয়াধীন। হাইমচরে অর্থনৈতিক অঞ্চল, মতলবে আইসিটি পার্ক, চাঁদপুর-মুন্সিগঞ্জ সেতু, চাঁদপুর আধুনিক নৌ-টার্মিনাল ও চাঁদপুর শহর রক্ষায় স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষাধীন। কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মাধ্যমেই এসব বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আসুন চাঁদপুরের ৫টি আসনে আবারও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করি। এই নৌকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতীক, এই নৌকা সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক, এই নৌকা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব লাভের প্রতীক, এই নৌকা এদেশের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসার প্রতীক, এই ‘নৌকা উন্নয়ন-সমৃদ্ধির প্রতীক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিগত নির্বাচনের মতো এবারও চাঁদপুরের ৫টি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীগণ বিজয়ী হলে জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরবাসীকে আরো অনেক উন্নয়ন উপহার দিবেন। আসন্ন সরকারের মন্ত্রীসভায় চাঁদপুরের এমপিগণ গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করে জেলাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করবেন।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুর জেলার ৫টি আসনে যোগ্য, গ্রহণযোগ্য, জনপ্রিয় ও অভিজ্ঞ নেতাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন। তাঁরা হলেন: চাঁদপুর-১ আসনে ড. সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর-২ আসনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রম, চাঁদপুর-৩ আসনে ডা. দীপু মনি, চাঁদপুর-৪ আসনে মুহম্মদ শফিকুর রহমান, চাঁদপুর-৫ আসনে মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। তাঁরা সবাই ইতোমধ্যে স্থানীয়, জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের মেধা, দক্ষতা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নৌকা প্রতীকে আপনাদের মহামূল্যবান ভোট প্রদান করার বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, এলাকাবাসী সবাইকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে এসে এবারের নির্বাচনকে ভোট উৎসবে পরিণত করুন। মাত্র একদিন কষ্ট করে আপনার মহামূল্যবান ভোট দিয়ে আগামী ৫ বছরের সুখ-শান্তি-কল্যাণ-উন্নয়ন নিশ্চিত করুন। ইনশাআল্লাহ আপনাদের মহামূল্যবান ভোটে চাঁদপুরের ৫টি আসনে নৌকার প্রার্থীগণের বিজয় নিশ্চিত হলে চাঁদপুরের অসমাপ্ত ও জনপ্রত্যাশিত উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং স্ব স্ব আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণের হাত ধরে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আসুন আমরা সবাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হই।
তিনি তরুণ-যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের মধ্যে অনেকেই এবার প্রথম ভোটার হয়েছ। আমি একান্তভাবে প্রত্যাশা করছি তোমাদের জীবনের প্রথম ভোট হোক নৌকায়। কেননা, নৌকায় ভোট দিয়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি, নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে, নৌকায় ভোট দিলেই আমরা সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ পাবো। স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে তোমরাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে তোমাদের।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ওমর পাটওয়ারী, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুসহ , চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, বিদায়ী সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ,সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান শোভন, সাবেক সভাপতি রোটাঃ কাজী শাহাদাত, জালাল চৌধুরী, শহীদ পাটওয়ারী,শরীফ চৌধুরী,গিয়াসউদ্দিন মিলন,সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা,সোহেল রুশদী, মির্জা জাকিরসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।