নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
চাঁদপুরে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক প্রস্তুত ও ব্লক ব্যবহারে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অংশীজনদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে জেলায় ৯৩টি ইটভাটার মধ্যে ৪৩টি ইটভাটা অবৈধ এবং ১২০ফুটের সনাতন ইটভাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টি।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে শহরের স্টেডিয়াম রোড পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর কার্যালয়ের হলরুমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই সভার আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বক্তব্যে বলেন, দেশ আগাচ্ছে আমাদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে। এই পৃথিবীতে আমাদেরকে বসবাস করতে হবে। আমাদের কর্মকান্ড দিয়ে যদি পৃথিবীকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাই, তাহলে আমরা ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এটি ভোগ করতে হবে। আমরা এক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন করতে চাই। যার ফলে আমরা যেমন বসবাস এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেভাবে বসবাস করতে পারে। আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারব। যদি আমাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যায় তাহলে অর্থ দিয়ে কি হবে।
ব্যবাসীয়দের বক্তেব্যের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা বলেছেন সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ২০১৯ সালে সার্কুলার করে জানান দিয়েছে ব্লক তৈরী এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ গ্রহণ করবে না। তখন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ভবনের দেয়াল, সীমানা প্রাচীর, হেরিং বন্ড, বন্ড রাস্তা, গ্রাম সড়ক টাইপ বিতে ইটের বিকল্প হিসেবে উক্ত আইনের ধারা ও উপধারায় ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলো। তবে সব ক্ষেত্রে ব্লক ব্যবহার করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সুযোগ রয়েছে। যারা ব্লক তৈরী করবেন, তাদের জন্য ব্যাংক ঋনের বিশেষ ব্যবস্থা আছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের ১০০ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আপনাদের সাথে আমাদের আজকের মতবিনিময়।
জেলার ইটভাটাগুলোর হালনাগাদ চিত্র ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রদক্ষেপ নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হান্নান।
ইট ভাটা মালিক পক্ষে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্দা এম এ কুদ্দুস, বিএইচএম কবির আহমেদ, শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম, সরকার মো. আলাউদ্দিন, পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলাম, গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশেক আয়নান, সড়ক বিভাগ চাঁদপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মারুফ হোসেন, শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী প্রমূখ।
ব্লক ইট তৈরী করার জন্য সরকার যে উৎসাহিত করছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে ইটভাটার মালিক ও মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুস বলেন, দুটি কোটি লোক আমাদের ইটভাটার উপর নির্ভরশীল এবং ৫০ লাখ লোক ইটভাটায় কর্মরত তাদের কর্মসংস্থানের কি হবে। এখানে সরকারের একটি দায় থাকে। এরপরে আমাদের ইটভাটার পর্যায়েক্রমে যে পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে আমাদের অনেক বিনিয়োগ। এক্ষেত্রে এখন আমরা ব্লক উৎপাদনে গেলে যে ক্ষতি সেই ক্ষতিপুরনের ব্যবস্থা যেন সরকার করে। আমরা এখনই ব্লক উৎপাদনে গেলে পরিস্থিতি কি হবে। এখনো ব্লক ও ইট দুটো কাজে ব্যবহার হয়। সরকার আমাদেরকে শুধু ব্লকই বিক্রি করা যাবে সব ক্ষেত্রে সেটির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
তিনি বলেন, ইটভাটা পরিবেশের কতটুকু ক্ষতি করে এটি কি পূর্বে বিশ্লেষণ হয়েছে। সারাদেশে শতভাগ পরিবেশের মধ্যে ইটভাটার মাধ্যমে ক্ষতি হয় ৮ভাগ। আর ৯২ভাগ অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এক্ষেত্রে সেগুলোও বন্ধ করতে হবে। আর আমাদের ইটভাটাগুলো চলমান থাকে মাত্র ৪ মাস। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ইট তৈরী বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব। আমাদের ব্লক ইটের বাজার কে তৈরী করবে? আমার মতামত হচ্ছে দেখে-শুনে সকলের মতামত নিয়ে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহন করে সকলের যেন ব্যবস্থা করে তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জন হবে।
সভায় জেলার ইটভাটার মালিক, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশলীরা উপস্থিত থেকে মতামত ও বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, তারা ইটভাটায় অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাদের প্রতিবছর অনেক লোকসান দিতে হয়। ইট তৈরী তাদের নিজেদের উদ্যোগ। এই শিল্পে বহু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী হয়েছে। ইট থেকে ব্লক প্রস্তুত করার জন্য তাদেরকে সময় দিতে হবে। তাদের লাইসেন্সে যেন প্রত্যেক উপজেলায় ব্লক তৈরীর অনুমোদন দেয়া হয়। সকলকে লাইসেন্স দিলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাদের জোর দাবি এখনই ব্লক তৈরীর মত নির্দেশনা না দিয়ে তাদেরকে সময় দেয়া হউক।
সভায় ইটভাটার মালিক ও প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ মনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম, জামিল আহমেদ খান, মো. ফখরুল ইসলাম, মো. খোরশেদ, রেদওয়ান আহমেদ, ফরহাদ, মো. হাসিবুল হাসান, মো. ফারুক খান, মো. শাহজাহান, শেখ মহিউদ্দিন স্বপন, উত্তম কুমার, মো. নাজির খান, মো. আঃ ছাত্তার মিজি, মাহবুবুর রহমান, নুরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মাওলানা মো. জসিম উদ্দিন, শফিউল আলম, মো. হাবিবুর রহমান সুমন, মো. বাবুল হোসাইন, ফারুক উল্লাহ, মশিউর রহমান, এরশাদ মজুমদার, মো. সোলেমান, মো. মিজানুর রহমান, মো. রায়হান খান, মো. কাশেম, মো. এমরান হোসেন ও মো. সাইফুল ইসলাম।