জেলেদের খাদ্য সহায়তা আরও বাড়ানো হবে : সমাজকল্যাণমন্ত্রী

 

 

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলতে হয়, জেলেদেরকে মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় যে সহায়তা দেয়া হয় সেটি যেন আরো বাড়ানো হয়। এটি ১০ কেজি থেকে বাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা ৪০ কেজি করেছেন। আর যারা নিবন্ধিত জেলে আছেন, তাদের তুলনায় খাদ্য সহায়তা ১০ভাগ কম আসে, কিন্তু এটি যেন সবার জন্যই আসে।

সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মূলহেডে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে ১১-থেকে ১৭ মার্চ জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জেলেদেরকে যে ধরনের উপকরণ দেয়া হয়, আমি মনে করি এখন সময় এসেছে সেগুলোর উপযোগিতা বিচার বিশ্লেষণ করার। অর্থাৎ তাদেরকে সেলাই মেশিন, বকনা বাচুর দেয়া হয় এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেগুলোর সাথে আর্থিক সহায়তা ও ঋণের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।

মন্ত্রী বলেন, গত নির্বাচনকালীন সময়ে আমি নদী উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে যখন গিয়েছি, তখন মৎস্যজীবী ভাইদের মূল দাবী ছিল আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমি বলবো নিশ্চয়ই সকলে করেন না, কোন কোন নৌ পুলিশ সদস্য আমাদের মৎস্যজীবী ভাইদেরকে হয়রানি করেন। আবার সব মৎস্যজীবীরাও যে ১৬ আনা আইন মানেন, তাও কিন্তু নয়। কারণ আমরা দেখছি গত ১১ দিনে যে পরিমান জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় আটক হয়েছেন, আপনারা যদি আইন মানতেন, তাহলে এই পরিস্থিতি হত না। আইন শৃংখলা বাহিনীত আপনাদের বাড়ী থেকে আটক করেনি, নদী থেকে আটক করেছেন।

দীপু মনি বলেন, নদীতে এখন আপনাদের নামবার কথা নয়। আমরা যেমন আপনাদের দিকটা দেখবো, সরকার যখন আপনার প্রয়োজনের দিকটা দেখবে, তেমনি আপনার ভবিষ্যতের স্বার্থে আইন ও নিয়ম মানতে হবে। সরকার যেসব নিয়ম বেধে দিয়েছেন সেগুলো মাথায় রাখতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগেও চাঁদপুরের বাজারে জাটকা দেখেছেন অনেকে। নিষেধাজ্ঞার সময়গুলো কিন্তু গবেষণার ভিত্তিতে করা হয়। গবেষণা ছাড়া কিন্তু সরকারের মাথায় আসেনি ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা ধরা বন্ধ থাকবে। এটি দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলাফল। কোন সময়ে আমাদের এই নদীতে জাটকার বিচরণ বেশী থাকে, সেই সময়ের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছে। গবেষকরাই বলতে পারবেন কি কারণে ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাটকা পাওয়া যাচ্ছে। এই সময় যদি পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়, গবেষকরা বললে সরকারি সেটিও করবে। যখন জাটকা ধরা নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু জেলেরা মাছ ধরবে। সেখানে যদি জাটকা চলে আসে, তখন সেটি বিক্রি হয়, তা প্রতিরোধ করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। এটিও আমাদের বুঝতে হবে এবং আইনের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

দীপু মনি বলেন, বেআইনী জাল ব্যবহারের ফলে মৎস্যজীবী ভাইদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, এই বেআইনি জাল যারা উৎপাদন করেন তাদের কয়জনকে ধরা হয় আমি জানতে চাই। আমার জেলে পল্লী ও ইলিশ গ্রামগুলোতে অভিযান চালানো হয়। আমি জানতে চাই মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জে এসব জালগুলো উৎপাদিত হয়, সেসব কারখানায় কতগুলো অভিযান চালানো হয়েছে, কতজন অবৈধ জাল উৎপাদনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সাজা দেয়া হয়েছে। আমাদের কিন্তু আসল গোড়ার জায়গাটা ধরতে হবে। বেআইনি জাল যদি উৎপাদনই না হয়, তাহলে এই জাল ব্যবহারও হবে না। উৎপাদন বন্ধ হলে ব্যবহার এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। অতএব যার যেখানে সুযোগ রয়েছে সেখান থেকে এই জাল উৎপাদন বন্ধে কাজ করবো।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বলেছেন মৎস্যই আমাদের একটি বড় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। আজকে তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাই হয়েছে। আমাদের মৎস্য এখন বড় রপ্তানি পন্য। আমরা আশাকরি এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরো বড় সুযোগ রয়েছে। আমিষ উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করেছি তাই নয়, তা এখন আমরা রপ্তানি করতে পরি। তার অর্থ হচ্ছে আমাদের খাদ্যের অভাব যেমন মিটেছে, এখন পুষ্টির অভাবটাও এই মন্ত্রণালয়ের মধ্য দিয়ে পুরো জাতির পুষ্টির চাহিদাও মিটছে।

দীপু মনি বলেন, আমাদের যে সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে নদীর নাব্যতা নষ্ট হচ্ছে, নদী দুষণ হচ্ছে। এইগুলো দুর কতে হবে। নদীর নাব্যতা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, নদীর দুষণ বন্ধ করতে হবে। চাঁদপুর-শরীয়তপুর যে সেতুর প্রস্তাব, সেটি আমরা বিকল্প প্রস্তাব করেছি। সেখানে সেতু হলে আসলেই নদী বিপন্ন হবে। সম্ভব হলে সেখানে যেন ট্যানেল কর হয়। এই বিষয়টি আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে আমরা তুলে ধরতে চাই। আজকে যিনি প্রধান অতিথি আছেন তিনিও যেন আমাদের পক্ষ সেই সুপারিশটি করেন।

তিনি বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় গর্ব। এই ইলিশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে এবং উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে সকলের। জেলেরা অনকে সময় আমাকে বলেন আমরা যখন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকি তখন খাব কি। আমার কথা হচ্ছে যারা কৃষক তারা তাদের ফসল উৎপাদনের জন্য ৩ মাস বা কম বেশী সময় নিতে হয়। তারপর ফলন হয়। এই সময়টা তার পূর্বে সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করেন। জেলে ভাইদেরকে বছরের অন্য সময় উপার্জিত অর্থ সঞ্চয় করে রাখতে হবে বিপদের সময়ের জন্য।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এবং জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন-মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর।

সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন শান্ত ও জেলা মৎস্যজীবী লীগ নেতা শাহ আলম মল্লিক।

অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, মৎস্য দপ্তরসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, মৎস্যজীবী নেতাসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে শহরের মোলহেড থেকে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ সংশ্লিষ্টদের অশংগ্রহনে মেঘনা নদীতে নৌ র‌্যালী বের হয়। র‌্যালীতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ শত শত মৎস্যজীবী অংশগ্রহন করেন।

Loading

শেয়ার করুন: