তরমুজ ফেলে দেওয়া হচ্ছে ডাকাতিয়ায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তরমুজ আসে চাঁদপুরে। মৌসুমি ফল তরমুজ বিক্রয়ের জন্য প্রতিদিন ট্রলারে করে নদীপথে চাঁদপুর শহরের চৌধুরীঘাট আড়গুলোতে আসে তরমুজ চাষি-ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তরমুজ বেচাকেনা। তরমুজকে কেন্দ্র করে আড়তগুলোতে প্রতিদিন লেনদেন হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। তবে বিগত বছরের তুলনায় ট্রলারভর্তি তরমুজের চালান নিয়ে এসে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে এবার হতাশ তরমুজ বিক্রেতারা।

তরমুজ চাষিরা জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তরমুজের গায়ে দাগ লেগে পচে গেছে। এছাড়া চাঁদপুরে নিয়ে আসার পথে ট্রলারেও অনেক তরমুজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে ডাকাতিয়া নদীতে ও নদীর পাড়ে ফেলে দিতে হচ্ছে তরমুজ। এছাড়া অবশিষ্ট তরমুজও কম দামে বিক্রয় করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কিছু তরমুজে দাগ, ফোটা, তরমুজ পরিপক্ব না হওয়ায় ক্রেতারা তরমুজ কিনতে চাচ্ছেন না।

সোমবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, তরমুজবোঝাই ট্রলারগুলো ডাকতিয়া নদীর পাড়ে নোঙর করা আছে। চাষি আর আড়তদারদের মধ্যে দর কষাকষি চলছে। শ্রমিকরা ব্যস্ত ট্রলারের পর ট্রলার তরমুজ খালি করতে। নষ্ট হওয়া তরমুজ ডাকাতিয়া নদীতে ও পাড়ে ফেলে দিতে হচ্ছে।

ভোলা থেকে তরমুজ নিয়ে আসা সাগর ইসলাম বলেন, এবার মোট ১২ একর জমিতে তরমুজ চাষ করি। প্রথমেই তিন একর জমির তরমুজ পোকার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ৮ একর জমির তরমুজের মধ্যে গত কয়েক দিনে বৃষ্টির কারণে তরমুজে গায়ে দাগ লেগে গেছে। এতে পাকা তরমুজগুলো পচে যাচ্ছে। আগে পাইকাররা জমি থেকে তরমুজ কিনতেন। এ বছর বৃষ্টি হওয়ায় পাইকারও পাচ্ছি না। এজন্য ট্রলারে করে চাঁদপুরে নিয়ে এসেছি। এখানে আট হাজার পিস তরমুজ নিয়ে আসি। কিন্তু তরমুজগুলো আনার পথে গরমের কারণে ট্রলারে তিন হাজার তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দিয়েছি। বর্তমানে পাঁচ হাজার তরমুজ বিক্রয় করছি।

তিনি আরও বলেন, এখানে বড় সাইজের তরমুজের দাম প্রতি শ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা, ছোট সাইজের তরমুজ ৬ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রয় করছি। জমিতে যে পরিমাণ তরমুজ আছে সেগুলো প্রায় পাঁচ লাখ টাকা বিক্রয় করতে পারব। তরমুজ উৎপাদনের জন্য ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ক্ষতি হবে।

পটুয়াখালী থেকে আসা তরমুজ চাষি কামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। আমি পাঁচ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে প্রায় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এ বছর চাষের অনুপাতে তরমুজ বিক্রয় হচ্ছে না। আগে ক্ষেতে যেত ব্যাপারীরা। এ বছর বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে ক্ষেতে কোনো ব্যাপারী আসছে না। যার কারণে চাঁদপুরে তরমুজ নিয়ে এসেছি। এখানে তরমুজ বিক্রয় তেমন একটা ভালো হচ্ছে না। অনেক টাকা ঋণ আছে। ভেবেছিলাম তরমুজ বিক্রয় করে ঋণ পরিশোধ করবো। কিন্তু এখন দেখি তা আর হচ্ছে না।

চৌধুরীঘাট আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ী মানিক জানান, বৃষ্টিতে তরমুজের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে চাষি-ব্যবসায়ীদের প্রচুর লোকসান হবে। বৃষ্টিতে তরমুজ নষ্ট হওয়ার কারণে সামনে তরমুজের দাম বাড়বে।

স্থানীয় খুচরা বিক্রেতা মাসুদ বলেন, বৃষ্টিতে তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা পাইকারি কিনে এনে ক্রেতা না থাকার কারণে লোকসান দিচ্ছি।

চৌধুরীঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কবির খান বলেন, চৌধুরীঘাটে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনা হয়। এ বছর বৃষ্টির কারণে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একজন কৃষক ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে দেড় লাখ টাকাও খরচ উঠাতে পারেননি। কয়েক হাজার কৃষক এই তরমুজ চাষ করছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কারণ তাদেরকে তরমুজ চাষ করার জন্য দাদনের টাকা দিয়েছিলাম। তাদের চাষকৃত তরমুজ আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

Loading

শেয়ার করুন: