দাম বেশি হলেও অ্যাপসে ধান বিক্রিতে অনীহা চাঁদপুরের কৃষকদের

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

দাম বেশি হলেও অ্যাপসে ধান বিক্রিতে অনীহা চাঁদপুরের কৃষকদের। সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে নানান হয়রানির কথা বলছেন চাষীরা। তাই সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। জেলা খাদ্য অধিদপ্তর বলছেন, প্রতিবছর ধান সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করানো হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে এ অ্যাপসে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। এবার কিছুটা আশাবাদী।
চাঁদপুরে চলছে ইরি-বোরো ধানের মৌসুম। মাঠ থেকে ধান কাটা ও ধান সংগ্রহের ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক-কৃষাণীদের। সরকারিভাবে এবার ৩২ টাকা কেজি ধরে ধান ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও কৃষকদের মাঝে রয়েছে অনীহা। ধান বিক্রিতে পরীক্ষা, যাতায়াত খরচ, সময় অপচয় ও কমিশন বাণিজ্যসহ নানান হয়রানির কথা বলছেন তারা। তাই সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে আগ্রহী নন কৃষকেরা।

সদর উপজেলার বাগাদী এলাকার কৃষক আবদুল কাদের জানান, সরকার যে ধান কিনে, আমরা জানি। তবে সরকার যেভাবে ধান, আমরা অফিসে লইয়া গেছিলাম একবার। অফিসে ধান হেরা গেলসের ভিতরে হালাইয়া যেটা উপরে ভাইসা উঠবে, এটা নিবে না। যেটা নিচে হড়বো হেটা নিবো। এরুকম সাইরি ধান, মহিলারাতো এ রকম বাছনি করতে পারবো না।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃষক খায়ের মিয়া বলেন, এক কেজি ধান লইয়া নতুন বাজারের অফিসে গেছি, হেরা ধানেরে হানিতে বিজাইছে। হেরা দেখছে যে কিছু ধান ভাইসা উঠছে, হেরা কইছে এই ধান চলবে না। ধানেরে আরো শুকাইতে হইবো। ধানের শুকাইয়া আগা কাইটা হের পরে আনতে হাইবো। এরপরে অনেকেরে দেখছি, ধান লইয়া গেছে গাড়ী বইরা। এই ধান হেগো পছন্দ অয়না। এই ধান ফেরত লইয়া আইছে। কৃষক জাব্বার হোসেন বলেন, একবার ধান বিক্রি করছিলাম। আমরা নিজেরা দিয়া আইয়ন লাগে। এরপরে কয় ধান শুকায় নাই। আবার আনছি, ধান শুকাইয়ছে। শুকাইয়া নিয়া আবার দিছি।

দেয়ার পরে ব্যাংকের টোকেন দিছে। ব্যাংককে গেছি, টাকা নাই। কয় পরে আইসা টাকা নিয়েন। একমাস পরে গিয়া টাকা আনছি। এতো বদারেশনের তো দরকার নাই। সরকার প্রয়োজন হইলে ওনাগো প্রতিনিধি পাঠাইয়া ধান নেক। আমরা ধান বেইছতে রাজি।

কৃষক নুরু মিয়া বলেন, সরকার যদি আমরা যেই পর্যায়ে ফসলের ধান হয়। মোটামুটি যেই পরিষ্কারটা করি। এই পরিষ্কারে যদি সরকার ধান নেয় তইলে, কৃষকও কিছু লাভবান হইবো, কৃষকও কিছু পাইবো। নিয়ম মেনে কৃষকেরা ধান দিতে না পারায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের জন্য প্রতি বছর লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হচ্ছে। নিবন্ধিত কৃষকেরা ধান বিক্রির জন্য আবেদন করতে হয়। তারপর লটারীর মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার কথা জানান জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য নিয়ন্ত্রক শ্যাম প্রসাদ চাকমা।

তিনি বলেন, নিবন্ধন করার পরে যে সমস্ত কৃষকগুলো লটারীর মাধ্যমে নির্বাচিত হইলো, দেখা গেলো সেখান থেকে শতকরা ১০ জনের মধ্যে ধান আছে। আর ৮০ বা ৯০ জনের মাঝে ধান নাই, বিক্রি করার মতো। কিন্তু এরা প্রকৃত কৃষক, নিবন্ধনকৃত। তাদের কাছে ধান নাই। আছে ১০ পারসেনের মতো। এটা একটা আমাদের সমস্যা।

চাঁদপুর জেলায় পাঁচটা উপজেলায় এই অ্যাপসের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে। এটা আমাদের উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য বা এলএসডি দপ্তর থেকে লিফলেট বিলি করি এবং মাইকিং করি। যাতে আমাদের সরকারি খাদ্য শস্য সংগ্রহ টার্গেটটা আমরা ফুলফিল করতে পারি। এটা আমরা প্রতি বছর করে থাকি। জেলার আট উপজেলার প্রায় ১৮শ কৃষক থেকে তিন টন করে এবার ৬ হাজার ১শ ৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর।

এর মধ্যে চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ ও শাহরাস্তি উপজেলায় এবার এ অ্যাপসের মাধ্যমে ধান ক্রয় করা হবে। বাকী তিনটি উপজেলা থেকে সরাসরি কৃষক থেকে ধান ক্রয় করার প্রস্তুতি চলছে।

Loading

শেয়ার করুন: