নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
আজ সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরের ৫টি আসনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪। আজ রবিবার(৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোট নিয়ে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠারও কমতি নেই। নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন তথা চাঁদপুর জেলা রিটানিং অফিসার। এখন কেবল ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি, ভোট প্রদান ও ফলাফল কেমন হয় এর জন্য অপেক্ষা।
এদিকে, বিএনপিসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। আজ নির্বাচনের দিনসহ তারা সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে।
অপরদিকে,ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করার জন্য শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
এবার চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে ৩০জন প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার জন্য নির্বাচনী মাঠে আছেন। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি,জাসদ,তৃর্ণমুল বিএনপি, জাকের পার্টিসহ অন্যান্য দলও আছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে ৮ উপজেলা,৭টি পৌরসভা ও ৮৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা ২১লাখ ৫৬ হাজার ৬০৯ জন।এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১লাখ ১২ হাজার ৫৭৭ এবং নারী ভোটার ১০লাখ ৪৪ হাজার ৩২জন।মোট ভোট কেন্দ্র ৭০০। মোট ভোট কক্ষ: ৪২৬৪ টি, স্থায়ী কক্ষ: ৪০৮৭টি, অস্থায়ী: ১৭৭টি।
এরমধ্যে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে ভোট কেন্দ্র ১০৯ টি, চাঁদপুর-২ (মতলব দক্ষিণ ও উত্তরে) ১৫৫ টি, চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে)-১৬৫ টি, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জে)-১১৮ ও চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে) ভোট কেন্দ্র ১৫৩টি।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন –
চাঁদপুর- ১ (কচুয়া): এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩২৫৭৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬৯৩৩১ জন, নারী ভোটার ১৫৬৪২৮ জন। ভোট কেন্দ্র ১০৯, প্রার্থী ৩ জন। আওয়ামীলীগ মনোনীত ড. সেলিম মাহমুদ (নৌকা), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মো. সেলিম প্রধান (চেয়ার) ও জাসদ মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম (মশাল)।
চাঁদপুর-২ (মতলব দক্ষিন ও মতলব উত্তর) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪৬৭২২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩৮৬৩৪ জন এবং নারী ভোটার ২২৮৫৯৪ জন। ভোট কেন্দ্র ১৫৫। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ৫ জন,তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম (নৌকা),স্বতন্ত্র এম. ইসফাক আহসান (ঈগল),জাতীয় পার্টির এমরান হোসেন মিয়া (লাঙ্গল), জাসদের মোহাম্মদ হাছান আলী শিকদার (মশাল) ও সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ মনির হোসেন বেপারী (একতারা)।
চাঁদপুর-৩ সদর আসন (চাঁদপুর সদর ও হাইমচর): এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫,০৮,৯৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৬৩,৮৯৩ জন। নারী ভোটার ২,৪৫,০৩৯ জন। একটি পৌরসভা, ২ টি উপজেলা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭জন,তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আলহাজ্ব ডা. দীপু মনি (নৌকা), স্বতন্ত্র ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া (ঈগল), মো. রেদওয়ান খান (ট্রাক), জাতীয় পার্টির মো. মহসীন খান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো: মিজানুর রহমান পেয়েছেন (ফুলের মালা) ও জাকের পার্টির মোঃ. কাওছার মোল্লা(গোলাপ ফুল)।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ ) ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,৬৯,১২৯ জন। পুরুষ ভোটার ১,৯২,৭৬৮ ও নারী ভোটার ১,৭৬,৩৬১ জন। ৯ জন প্রার্থী,তারা হলেন-আওয়ামী লীগের সাংবাদিক মুহাম্মদ শফিকুর রহমান (নৌকা),ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া (ঈগল), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ড. মুহাম্মদ শাহজাহান (নোঙর), জাতীয় পার্টির সাজ্জাদ রশিদ (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র জালাল আহমেদ (ট্রাক), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবদুল গনি (আম), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী (ফুলের মালা), তৃণমূল বিএনপি’র মোঃ আবদুল কাদের (সোনালী আঁশ)।
চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি): এ আসনে মোট ভোটার ৪,৮৫,৫৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৪৭,৯৫১ ও নারী ভোটার ২,৩৭,৬১০ জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৬ জন। তারা হলেন আওয়ামীলীগ মনোনীত মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম (নৌকা), গাজী মো. মাঈনুদ্দিন (ঈগল), মো. শফিকুল আলম (ট্রাক), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী (চেয়ার), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের এর বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী (ফুলের মালা), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের আক্তার হোসেন (ছড়ি)।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এএসএম মোসা জানান, নির্বাচনের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ৫টি আসনে সেনাবাহিনী ১০ প্লাটুন, বিজিবি ১৪ প্লাটুন, র্যাব ৫প্লাটুন এবং প্রত্যেক কেন্দ্রে আনসার ও বিডিপির স্টাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট ৩০জন এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালনে আছেন ১০জন।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে জেলার ৫টি আসনে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। যথেষ্ট পরিমান পুলিশ বাহিনী মোতায়েন আছে। এখন পর্যন্ত জেলায় বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
চাঁদপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্দেশিত নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের মাধ্যমে নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে ও শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে । প্রত্যেকটি আসনের নির্বাচন সংশ্লিষ্টদেরকে নির্বাচন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সার্বিক দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে সব দল অংশ গ্রহণ করতে পারে, সে জন্য তফসিল ঘোষণার বেশ আগে থেকেই উৎসাহ দিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। এ লক্ষ্যে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের সাথেও দফায় দফায় আলাপ-আলোচনা করেছে দেশগুলো। কিন্তু নিরপেক্ষ সরকারে দাবি মেনে না নেওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। ফলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোটাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
সেই চ্যালেঞ্জের জাতীয় নির্বাচন আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের অধীন আজকের নির্বাচনে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ আর নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে আছেন বিএনপি। ২০২৪ সাল কোন দিকে যায় সেই দিকে তাকিয়ে চাঁদপুর সহ দেশবাসী।
