নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রায় ৩৫ বছর ধরে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম রুটে চলছিল শাহী ও জোনাকী বাস। গাড়ি প্রতি ৬০ টাকা চাঁদা দিয়েই চলতো। গত এক সপ্তাহ পূর্বে চাঁদপুর শ্রমিক- মালিক সমিতির ইউনিয়নের লোকজন অতিরিক্ত আরো ১২০ টাকা চাঁদা দাবি করলে এই দুই বাস মালিক এই রুটে বাস চলাচল বন্দ করে দেন। এতে বিপাকে পড়েন ফরিদগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামগামী যাত্রীরা।
ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ভোর ৩টা ৪০ মিনিট থেকে শুরু করে সকাল সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত চলাচল করতো শাহী ও জোনাকী বাস। হঠাৎ বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
শাহী বাস মালিক রায়হান আহমেদ জানান, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন হঠাৎ করেই অতিরিক্ত চাঁদা দাবি করেন, সে কারনে আমরা এ রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। দীর্ঘ ৩৫ বছর এ রুটে আামাদের গাড়ি চলাচল করে আসছিল, প্রায় প্রতিনিয়তই আমরা লোকসান দিয়ে জনসাধারনের ভালোবাসায় এই রুটে গাড়ি চালিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ আমাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই বাড়তি ১২০টাকা বাড়তি চাঁদা দাবি করে। যাহা মোটেই কাম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত চাঁদা দিয়ে আমরা এ রুটে ব্যবসা করবো না। চাঁদার বিষয়টি সমাধান হলে আমরা এই রুটে গাড়ি চালাবো।
চট্টগ্রামগামী যাত্রীদের মধ্যে সাগর, ফাতেমা, কবির, পারভিন, বুলু বেগমসহ কয়েকজনের সাথে কথা হলে জানান, দীর্ঘ দিন ফরিদগঞ্জ থেকে সকালে ভোরে শাহী বা জোনাকী বাসে করে চট্টগ্রাম যেতাম। হঠাৎ করে বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। এখন আমরা ফরিদগঞ্জ থেকে দুইটি গাড়ি বদল করে রায়পুর যেতে হয়। এতে করে বাড়তি টাকা, সময় ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। আমারা চাই এই উপজেলার নেতারা অচিরেই জনসাধারণের কথা বিবেচনা করে সকল ধরনের সমস্যা সমাধান করবেন।
চাঁদপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বুলবুল মিজি জানান, শাহী ও জোনাকী বাস চাঁদপুর ডিসি আইটি কমিনিউটির আইন অমান্য করে দীর্ঘ দিন গাড়ি চালিয়েছে। ফরিদগঞ্জ থেকে চট্রগ্রাম এই গাড়ি চলাচলের অনুমোদন নাই। পরিবহেনর নিতিমালা অনুযায়ী এই রুটের রুট পারমিট ও জেলা মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের অনুমতি লাগবে। কিন্তু শাহী ও জোনাকী বাস তা নেয় নি। তাই আমরা বলেছি এই রুটে গাড়ি চালাতে হলে তারা যেন নিয়ম অনুযায়ী রুট পারমিট নিয়ে গাড়ি চালায়। অতিরিক্ত চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
আমরা একটি চাঁদার বিবরণ পেয়েছি, এই রুটে গাড়ি চলতে হলে আগে পৌর ইজারাদার ২০ ও পার্কিং ভাবত ৪০ টাকা দিত গাড়ির লোকজন। গত ৮ দিন পূর্বে আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পৌর ইজারাদার ২০, লাইনম্যান ২০, উপজেলা মালিক সমিতি ২০, উপজেলা শ্রমিক কমিনিউটি ২০, জেলা মালিক সমিতি ৩০, জেলা শ্রমিক কমিনিউটি ৩০ ও পার্কিং ভাবত ৪০ মোট ১৮০ টাকা দিতে হবে। এই চঁাদা দিতে না পেরে শাহী ও জোনাকী বাস কর্তৃপক্ষ এই রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রুট ব্যবহার করলে এইসব চঁাদা দেওয়া লাগে এইটি নিয়ম।
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জনেছি, কোন প্রকার অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী জানান, শাহী এবং জোনাকি বাস চাঁদপুরের রুট ব্যবহার করে কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়নকে কোন চাঁদা দেয়না। তারা জৈনক রাজা নামের ব্যক্তিকে পার্কিংয়ের নামে ৪০ টাকা চাঁদা দেয়। অথচ সরকারের সম্পতি ব্যবহার করে দীর্ঘ দিন অবৈধ ভাবে চাঁদা নিচ্ছে। এ রুটে গাড়ি চালাতে হলে শ্রমিক সংগঠনকে চঁাদা দিতে হবে এবং শ্রমিক আইন মানতে হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে আনন্দ গাড়িও একই দারায় তিন দিন বন্ধ থাকার পর অতিরিক্ত ৪০ টাকা চাঁদা দিয়ে এই রুট ব্যবহার করছে। পূর্বে প্রতিটি আনন্দ গাড়ি ৬০ টাকা চাঁদা দিত এখন ৪০ টাকা রাড়িয়ে ১০০ টাকা দিচ্ছে।