ভূমিহীন এবং গৃহহীন মুক্ত হলো চাঁদপুরের ৮ উপজেলা

 

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের জন্যে আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের আবাসন কর্মসূচি আশ্রয়ণ-২-এর আওতায় গতকাল ১১ জুন মঙ্গলবার সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে আরো ১৮হাজার ৫৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর করেন।

সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, কক্সবাজারের ঈদগাঁও এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।

এ সময় চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন থেকে উক্ত অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করেন সুবিধাভোগীসহ চাঁদপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জমিসহ ঘর করে দিচ্ছি। এরই মধ্যে যাদের ঘর দেওয়া হয়েছে তাদের জীবনমান বদলে গেছে। তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্যে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন।
এর মধ্যে এবার চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকার প্রধান লালমনিরহাটে ১ হাজার ২৮২টি, কক্সবাজারে ২৬১টি এবং ভোলায় ১ হাজার ২৩৪টি বাড়ি হস্তান্তর করেন।নতুন ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ও উপজেলা নিয়ে সারাদেশে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮টি জেলা এবং ৪৬৪টি উপজেলা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি এবং চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করেন। প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে দুই দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিকানা দিয়ে একটি আধা-পাকা বাড়ি দেয়া হচ্ছে, যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই হবে। প্রতিটি বাড়িতে দু’টি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং বারান্দা রয়েছে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর ও জমির মালিকানা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন (একটি পরিবারে পাঁচ জন করে)।

প্রকল্পের আওতায় এই পর্যন্ত সারাদেশে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের প্রায় ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে আশ্রয়ণ এবং অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধুমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে আবাসন প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ভিডিও কনফারেন্সের এই অনুষ্ঠানে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
চাঁদপুরের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশজুড়ে রচিত হচ্ছে দিনবদলের কাব্য, যাতে পিছিয়ে নেই সুপ্রাচীন জনপদ চাঁদপুরও। সেই সুবাদে ১১ জুন ২০২৪ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চম পর্যায়ের (২য় ধাপে) দেশব্যাপী ১৮,৫৬৬টি গৃহের শুভ উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মতলব উত্তর, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি, মতলব দক্ষিণ, কচুয়া, হাজীগঞ্জ উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুর জেলায় এ পর্যন্ত ১২৯০ জন ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পরিবারপ্রতি ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক উক্ত জমিতে ৪০০ বর্গফুট আয়তনের ২ কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা একক গৃহ প্রদান করা হয়েছে। নির্মিত ঘরে সুপরিসর ২টি কক্ষের সামনে টানা বারান্দা এবং পেছনে রয়েছে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি পুনর্বাসিতদের জন্যে রয়েছে নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা।

Loading

শেয়ার করুন: