নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সারিবদ্ধ ফুল ফুটে আছে। তবে না, এগুলো মূলত বিদেশি জাতের বেগুনি রঙের বাঁধাকপি। প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। বিদেশি এই সবজি চাষে সফল হয়েছেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার কৃষক আবদুর রহমান (৫৫)।
আবদুর রহমান সারা বছরই তার জমিতে নানা ধরনের শাকসবজির আবাদ করে থাকেন। তবে এবার তিনি স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে রঙিন বাঁধাকপি চাষ করে চমক দেখিয়েছেন। তার অল্প জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধু জৈব সার প্রয়োগ করে বেগুনি রঙের বাঁধাকপি চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। তার এমন সফলতা দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অন্যান্য কৃষকও।
এদিকে রঙিন বাঁধাকপির সৌন্দর্য দেখতে কৃষক আবদুর রহমানের জমিতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অনেক কৃষকসহ স্থানীয়রা।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের পূর্ব মহেশপুর গ্রামের আলী আহম্মদের ছেলে কৃষক আবদুর রহমান। এ বছর তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে ২৪ শতক জমিতে ফুলকপিসহ অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ১০ গ্রাম রঙিন বাঁধাকপির বীজ বপন করেন। এতে তিনি শুধু জৈব সার ব্যবহার করছেন।
কৃষক আবদুর রহমান বলেন, এবারই প্রথম রঙিন বাঁধাকপির চাষ করেছি। কৃষি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে কুমিল্লা থেকে এ বীজ এনে দিয়েছেন। ১০ গ্রাম রঙিন বাঁধাকপির বীজ ৫২০ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। প্রথমে এর অর্ধেক বীজ জমিতে বপন করেছি। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকার বাঁধাকপি বিক্রি করেছি। বাকি বীজ কয়েক দিন আগে জমিতে বপন করেছি। এগুলো এখন জমিতেই আছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে বিক্রয় করি। আর প্রতি পিস বাঁধাকপিতে খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা।
কৃষক আবদুর রহমান বলেন, আমি এ জাতীয় বাঁধাকপি চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। রঙিন বাঁধাকপিগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। এসব বাঁধাকপি দেখতে প্রতিদিনই এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ আমার জমিতে ভিড় করছেন। অনেকেই এ জাতীয় বাঁধাকপি চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এবং আমার কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন।
একই এলাকার কৃষক আব্দুল কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় এই প্রথম রঙিন বাঁধাকপি চাষ করা হয়েছে। এটা অনেক লাভজনক। তা দেখে আমরাও আগামীতে এ জাতের বাঁধাকপি চাষ করতে চাচ্ছি।
আরেক কৃষক বিল্লাল মজুমদার বলেন, আগে সবুজ রঙের বাঁধাকপি ছিল। এখন বেগুনি রঙের বাঁধাকপি আসছে। আমাদের আবদুর রহমান ভাই নতুন এ জাতের কপি চাষ করেছেন। আগে কখনো এ জাতের বাঁধাকপি দেখিনি। শুনেছি এটির ফসল ভালো হয়, দামও বেশি। আগামীতে আমিও চাষ করতে চেষ্টা করবো।
খোকন নামের আরেক কৃষক বলেন, আমাদের এলাকায় আবদুর রহমানের আগে অন্য কেউ রঙিন বাঁধাকপির চাষ করেনি। আমিও বাঁধাকপিগুলো দেখেছি। খুব ভালো ফলন হয়েছে। এতে খরচ কম এবং বাজারে চাহিদা ও দাম বেশি। আগামীতে আমিও আমার জমিতে রঙিন বাঁধাকপি চাষ করবো।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, বাঁধাকপি এক ধরনের শীতকালীন সবজি। এ জাতের রঙিন বাঁধাকপির বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য আছে। অন্যান্য গুণের সঙ্গে এটাতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টও রয়েছে। আমি চেয়েছিলাম এরকম একটি নতুন ফসল হাজীগঞ্জের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। সেজন্য খুব অল্প কিছু বীজ দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কৃষক আবদুর রহমানকে দিয়ে শুরু করেছি। আমার মনে হচ্ছে তিনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। তার দেখাদেখি স্থানীয় অনেক কৃষকই এখন রঙিন বাঁধাকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আশা করছি, আগামী বছর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এটা ছড়িয়ে দিতে পারব। আমরা সব সময় কৃষকদের পাশে আছি।