শহর ও গ্রামে ভয়াবহ লোডশেডিং, সর্বোচ্চ তামপাত্রা ৩৮.১ ডিগ্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

চাঁদপুর জেলা সদরে বিদ্যুতের লোডশেডিং গত প্রায় দেড় মাস থেকেই শুরু হয়েছে। তবে গত ১ সপ্তাহ ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে। গ্রাম আর শহর প্রায় সব জায়গায়ই একই অবস্থা। স্বাভাবিক সময়ে শহরের বিদ্যুতের লোডশেডিং তেমন ছিল না। কিন্তু গ্রামে একাধিকবার লোডশেডিং দেয়া হত। এখন শহরে গড়ে ১০-১২ ঘন্টা এবং গ্রামে ১২-১৬ঘন্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। যার ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গ্রামের মানুষও এখন শহরের মতো ইলেকট্রনিক্স জিনিপত্র ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। বৈদ্যুতিক পাখা যখন রাতে বন্ধ থাকে তখন এই গরমের সময় ঘুমানো অনেক কষ্ট কর হয়ে পড়ছে। এতে বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিশু ও বয়স্ক লোকজন।

চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যানঘাট এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন জানান, গতকাল রাত থেকে আজকে দুপুর পর্যন্ত ৬-৭ বার বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়েছে। গরমে আর ঠান্ডায় তিনি এখন অসুস্থ্য। কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে। গড়ে ১০-১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এক ঘন্টা পর পর লোডশেডিং দেয়া হয়।

একই এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, তার ১বছর বয়সী কন্যা শিশু ফাইজা খুবই অসুস্থ। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে চিৎকার দিতে থাকেন। বিদ্যুৎ এলে কিছু সময় ঘুমান, আবার বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘুম থেকে জেগে উঠে।

শহরের পুরান বাজারের বাসিন্দা হাসানুর রহমান বলেন, সোমবার দিনগত রাত ১২টার পরে ১ ঘন্টা, ভোর রাতে ১ ঘন্টা এবং সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না। গড়ে দিন ও রাতে ১২ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রহুল আমিন হাওলাদার জানান, গতকাল রাতে সন্ধ্যার পর থেকে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। ৪টার পরে বিদ্যুৎ আসে। সারারাত ঘুমাতে পারেনি। সকালে ঘুমিয়েছি। এই এলাকায় গড়ে ১৪-১৬ঘন্টা লোডশেডিং হয়। ঘরের ইলেকট্রনিক্স সব জিনিসই এখন ব্যবহার বন্ধ। ফ্রিজের খাবারও নষ্ট হয়ে যায়।

মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর এলাকার বাসিন্দা লিটন মিয়া জানান, তাদের এলাকায় দিন ও রাতে গড়ে এখন ৬-৭ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। বাকী সময় লোডশেডিং থাকে।

কচুয়া উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মহসিন হোসাইন জানান, উপজেলা সদরে দিন ও রাতে গড়ে ১০ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। তবে গ্রামাঞ্চলে আরো কম থাকে।

হাইমচর উপজেলার মহজমপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ইব্রাহীম জানান, গত এক সপ্তাহ পূর্বে দিন ও রাতে গড়ে ১০ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়াগেছে। কিন্তু দুইদিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬-৭ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। বাকী সময় লোডশেডিং।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা প্রবীর চক্রবর্তী জানান, পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ গড়ে ১২ঘন্টা থাকে। তবে গ্রামঞ্চলে লোডশেডিং প্রায় ১৫-১৭ঘন্টা।

চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ মুহাম্মদ শোয়েব জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত চাঁদপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.১ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া আপেক্ষিক আর্দ্রতা ০৭৬%। চলমান এমন মৃদু, মাঝারি এবং তীব্র তাপ প্রবাহ আরো ৫-৬ দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানানো হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান জানান, আমাদের জেলা সদরে অর্থাৎ আমাদের এরিয়া পর্যন্ত দিন ও রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ২৫-২৬ মেগাওয়াট। এখন গড়ে পাচ্ছি ১৪-১৬ মেগাওয়াট। তবে প্রতি ঘন্টায় বিদ্যুৎ প্রাপ্তির হার পরিবর্তন হয়। মূলত জাতীয় গ্রীড থেকে যেভাবে বিদ্যুৎ সরবারের নির্দেশনা আসে সেভাবেই আমাদের লোডশেডিং দিতে হয়। নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

Loading

শেয়ার করুন: