শীতার্তরা পেল সাইরেনের ১ হাজার উপহার

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

হেমন্তের শেষ ভাগে এসে সুর্যের তাপ যত কমে আসছে হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা দুর্ভোগ যেন ততই বাড়ছে। এবার শীত যেন একটু আগেভাগেই চলে এসেছে। আবার শীতের আগমনে একটু যেন উস্কানি দিয়ে গেলো ঘূর্ণিঝড় ‘…….‘ এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তৈরি হওয়া ঠান্ডা আবহাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছিলেন শহরের লঞ্চঘাট, রেলওয়ে কোর্ট স্টেশনের ছিন্নমূল মানুষ।

চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী সমাজসেবী সংগঠন সাইরেন প্রতি বছরের মতো এবারো শহরের প্রায় ১ হাজার মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গত ২২ ডিসেম্বর বিকেলে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিন্নমূল ও কর্মজীবি মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।এ সময় চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন “কিছু না করার চাইতে অল্প করা ভালো। সাইরেন তার সাধ্যমতো দরিদ্রদের পাশে দাড়িয়েছে, এই উদ্যোগ নিশ্চয়ই ইতিবাচক। সকল সামর্থবানদের উচিত শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো।

সংগঠনের সভাপতি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম সোহেল এর নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্যরা রিক্সাচালক ও অসহায় হতদরিদ্র মানুষের গায়ে শীতের পোশাক পরিয়ে দেন। এসময় সাইরেন এর সভাপতি ডা. সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন “সমাজের সচেতন মানুষ হিসেবে নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য সাধ্যানুযায়ি কিছু করার ইচ্ছা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ। তৈরি পোশাক এদেশে খুবই সহজলভ্য। সামান্য অর্থের বিনিময়েই একজন মানুষের কষ্ট দুর করা যায়। আমরা সবাই মিলে চাইলেই এসকল ছোটখাটো সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি।”

শীত নিয়ে সাহিত্য রসের উদাহরণ কিংবা মুখরোচক নানারকম খাবারের আয়োজন ও বাঙালিয়ানার ঐতিহ্য রয়েছে ঢের। কিন্তু শীতে সত্যিকারের জীবনবোধ দেখতে হলে আপনাকে নেমে আসতে হবে রাতের নিস্তব্ধ কুয়াশাচ্ছন্ন পথে। এ পথের পাশেই জড়োসড়ো হয়ে পড়ে থাকা মানুষগুলোর গল্পে আপনি খুঁজে পাবেন শীতের তীব্রতা। একটু উষ্ণতার জন্য পুরনো কাপড়ের কুন্ডুলি পাকিয়ে এরা পড়ে থাকে পথের ধারে কিংবা স্টেশনের এক প্রান্তে। শীতের রসবোধ এদের কাছে ধরা দেয় কঠিন বাস্তবতা নিয়ে। যে বাস্তবতায় পরিবারের মহিলা, শিশুসহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে জীবনধারণ করাই যেন দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। এই বিষয়টি উপলব্ধি করে সাইরেন সদস্যরা রাতের নিস্তব্ধ শহরে ঘুরে ঘুরে ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতের পোশাকের ব্যাবস্থা করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ওসাধারণ সম্পাদক মোঃ ফিরোজ আলম বলেন এদেশে সমস্যার অন্ত নেই। তবে আমরা সাধারণ মানুষ চাইলেই একটু সচেতনতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান করতে পারি। প্রয়োজন শুধু একটু সদিচ্ছা। সীমিত সাধ্যের সর্বোচ্চ ব্যাবহারের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি সমাজের পজেটিভ পরিবর্তন ঘটাতে। প্রতিবছরই শীত এলে সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীরাও সাধ্যমতো সাধারণ মানুষের পাশে দাড়ান। কিন্তু পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল ব্যাবস্থাপনার অভাবে এসব সহযোগিতার সিংহভাগই বরাদ্দ অনুযায়ী কাজে আসে না। আবার কিছু সহযোগিতা থাকে এরকম যে, তা বিতরণ করতে করতে শীত পেরিয়ে যায়। তাই মৌসুমের শুরুতে এ বিষয়ে সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিলে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচবে ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী। জেলা প্রশাসন চাইলে এ বিষয়ে সমন্বয়ের দায়িত্ব নিয়ে উদ্যোগ নিতে পারে। তাই শীতের শুরুতেই একটি সুষ্ঠ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জেলার শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে।

এসময় সংগঠনের উপদেষ্টা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরো উপ পরিচালক শফিকুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, সহ সভাপতি চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলম, সহ সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নিরব, দপ্তর সম্পাদক সাঈদ পাটোয়ারী, সদস্য রুবেল, খোকন, মাসুদ সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

Loading

শেয়ার করুন: