হাসনা জাহান ॥
চাঁদপুরে আরিফ হোসেন ওরফে আরিফ খান (২৭) নামের এক যুবককে হত্যার দায়ে মাসহ দুইজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ ফারহানা ইয়াছমিন এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মৃত দক্ষিণ আলগী মাসুম খান বাড়ির মিজানুর রহমান খানের স্ত্রী ও আরিফের মা খুকি বেগম (৫০) এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গাজী বাড়ির গণি গাজীর ছেলে জয়নাল গাজী (২৪)।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালি গ্রামের মোল্লা বাড়ির বিল্লাল মোল্লার ছেলে মাহবুব মোল্লা (২৭) এবং হোসেন মোল্লার ছেলে ইউছুফ মোল্লা (২৭)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সঙ্গে আসামি জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যান। এর ফলে মা-ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। এদিকে, ২০১৫ সালের শুরুতে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজি বাড়ির আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন। খুকি বেগম প্রথমে বিষয়টি মানতে না চাইলেও একপর্যায়ে মেনে নেন।
কিন্তু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খুকি বেগমের সঙ্গে তার ছেলে ও ছেলের বউয়ের ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। এরই মধ্যে খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমা আক্তারকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন খুকি বেগম। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে খুকি বেগম তার নিজ বাড়িতে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগীদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে ও দা দিয়ে কুপিয়ে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানায় ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে রেখে গেছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসে এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাট পার হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে আরিফ মারা যায়।
এ ঘটনায় ওইদিনই আসমা আক্তার তার শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) বদিউজ্জামান কিরণ জানান, দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় মামলা চলাকালীন আদালত ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আজ এই রায় দেন।
তিনি আরও জানান, আসামিদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা প্রথম থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে থাকলেও রায়ের সময় অনুপস্থিত ছিলেন।